বাকের ভাইয়ের জন্যে সহমর্মিতা বাংলাদেশে অভাব নেই। হুমায়ুন আহমদের উপন্যাস নিয়ে তৈরী জনপ্রিয় টিভি সিরিয়ালে বাকের ভাইয়ের মৃত্যুনদন্ডে দর্শকদের প্রতিক্রিয়া এখনো আমাদের স্মৃতিতে উজ্বল। একই নামের আরও একজন বাকের ভাই চলে গেলেন আমাদের ছেড়ে। এ যাত্রায় ছায়া জগতের কেউ নন, জ্বলজ্যান্ত রক্ত মাংসের বাকের ভাই। মৃত্যুর পর মানুষের মন্দ নিয়ে কথা বলা আমাদের ধর্মীয় ও সামাজিক সাংস্কৃতির অংশ নয়, এমনটা চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। কিন্তূ গতকাল একজন ’বিশিষ্ট’ বুজুর্গের বক্তব্য শুনে বাকের ভাইয়ের জীবন নিয়ে মরনোত্তর মনতব্য করতে সাহষ করলাম। ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির আমির ও ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনী ঘোষনা দিয়েছেন ইসলামে নারী নেত্রীত্ব নিষেধ থাকলেও উনার জন্যে এ কাজটা বৈধ ছিল কারণ যে নারীর নেত্রীত্ব মেনে উনি সরকারে যোগ দিয়েছিলেন তিনি ইসলামের পক্ষে কথা বলতেন (http://amibangladeshi.org/blog/01-05-2010/922.html#comment-377)। ধর্মের নিষেধ যদি মুফতির ফতোয়ায় বদলানো যায়, তাহলে মরণোত্তর মনতব্য নিয়ে ধর্মীয় বিধি খন্ডাতে আমার কেন অধিকার থাকবেনা? আমিও তো মাঝে মধ্যে ভাল কথা বলি! ধন্যবাদ আমিনী সাহেবকে এমন একটা সূযোগ করে দেয়ার জন্যে।
জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ব্যাংক এমল্পোয়িস ফেডারেশনের চেয়ারম্যান ও সদ্য ঘোষিত বিএনপির কার্য্যকরী পরিষদের সদস্য বিএম বাকের হোসেন ৭ই জানুয়ারী বৃহস্পতিবার স্থানীয় এপ্যোলো হাসপাতালে দুপুর ২:৩০ মিনিটে মারা গেছেন। মানুষ মরণশীল, সৃষ্টির এ অমেঘো পরিনতি হতে কারও রেহাই পাওয়ার রাস্তা এখন পর্য্যন্ত বিজ্ঞানীরা আবিস্কার করতে পারেনি। বাকের ভাইও রেহাই পান্নি, আমি আপনি পাওয়ার তো প্রশ্নই আসেনা। আসুন বাকের ভাইয়ের মৃত্যুতে দু’ফোটা চোখের পানি ফেলে সহানুভূতি প্রকাশ করি।
বাকের ভাইয়ের মৃত্যু অন্য দশটা মৃত্যুর মত স্বাভাবিক মৃত্যু ছিলনা। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে র্দুনীতির দায়ে জেলে গিয়েছিলেন ১৩ বছরের জন্যে। জেল খাটা অবস্থায় মারা গেছেন নেতা বাকের ভাই। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ দল বিএনপির চেয়ারপারসন জনাবা খালেদা জিয়া ইতিমধ্যে নিন্দা জানিয়েছেন রাজনৈতিক সহযোদ্বার রহস্যজনক মৃত্যুতে। তিনি বলছেন, পুলিশী নিয়ন্ত্রনে এ ধরনের মৃত্যু মানবাধীকারের পরিস্কার লংঘন। খুব দেরীতে হলেও এ ধরনের বোধদয়ের জন্যে জনাবা জিয়া ধন্যবাদ পেতে পারেন। ক্রসফায়ার নামের এক্সপ্রেস মৃত্যুদন্ড যতদূর জানি এই মহিয়সীর আবিস্কার।
বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থার সাথে যাদের কিছুটা পরিচয় আছে তাদের জানা থাকার কথা এম্ল্পোয়িস ফেডারেশন কি চীজ। যতদূর জানি বাকের ভাই ক্ষমতার ভরা যৌবনে ব্যাংক সমূহের এমডিদের দরজা খুলতেন পায়ের লাথিতে, বসতেন ঠিক এমডির পাশের চেয়ারটায়। বাকের সাহেবের মূল কাজ ছিল সরকারী মদদে বদলী বানিজ্য। কোটি কোটি টাকা লেনাদেনা হত প্রায় খোদার সমান ক্ষমতাধর এই মানুষটার হাত দিয়ে। মন্ত্রী আর আমলাদের পকেট ভারী করার বিনিময়ে তিনি পেয়েছিলেন সরকারী ব্যাংক সমূহের অঘোষিত মালিকানা। ১০০ টাকা হতে ১০০ কোটি টাকা পর্য্যন্ত ঋণ পেতে প্রয়োজন হত এই ছায়া মালিকের করুনা। অবশ্য করুনাও একটা প্রাইস ট্যাগ ছিল, যা স্তরে স্তরে ভ্রমন শেষে চলে যেত বাকের ভাইয়ের ব্যক্তিগত তহবিলে।
বাকের ভাইদের উত্থান বাংলাদেশের জন্যে নতুন কোন চমক নয়, এদের দেখা যায় সরকারের সব অংগ প্রত্যংগে। শান্তি নগরের গ্যাস অফিস, কাওরান বাজারে পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের হেডকোয়ার্টার, মতিঝিলের পিডিবি অফিস, পানি উন্নয়ন বোর্ড সহ হেন কোন জায়গা নেই যেখানে বাকের ভাইদের দেখা মিলবেনা। নিন্দুকেরা বলেন অন্য কথা, বাকের ভাইরা আসলে নাকি ক্ষমতাসীন দলের নেতা-নেত্রী আর মন্ত্রীদের ছায়া মাত্র। সামনে আসতে লজ্জা লাগে, তাই ভূত সেজে বাকের ভাইদের উপর ভরে বুঝে নেন নিজদের পাওনা।
না, আজ আমি মৃত বাকের ভাইকে বিচার করতে যাবনা, বাকের ভাই এখন অন্য দুনিয়ার বাসিন্দা, এবং বলা হয় ঐ দুনিয়ার মালিক সবকিছু দেখেন ও বুঝেন। বাকের ভাইয়ের বিচারের ভার ঐ মালিকের উপরই ছেড়ে দিলাম। কিন্তূ বাকের ভাইদের আহার বানিয়ে যারা হাতী ঘোড়া শিকার করেছে তাদের বিচার চাইলে কি ধর্মীয় কোন বিধি নিষেধ লংঘিত হবে? এ জিজ্ঞাসার উত্তর মুফতি আমিনীর নিশ্চয় জানা থাকার কথা। আমি উনার কাছেই যাচ্ছি, দোয়া করবেন আমার জন্যে।
বাকের ভাই মরে গেছে, তাই বলে নতুন একজন বাকের ভাইয়ের জন্ম কিন্তূ থেমে থাকেনি। নতুন বাকের ভাইকে দেখতে চাইলে সত্বর চলে যান উপরে বর্নিত স্থানগুলোতে। বাকের ভাইরা মরেনা, আইনষ্টাইনের সূত্রমতে এক চেহারা হতে অন্য চেহারায় রুপান্তরিত হয় মাত্র।