হাইতির ভূমিকম্প কতটা ভয়াবহ ছিল তার তথ্যাদি ইলেকট্রনিক মিডিয়ার বদৌলতে বিশ্ব এখন জানতে শুরু করেছে। ইদানিংকালে ৭.০ ম্যাগনিচ্যুডের ভূমিকম্প বিশ্বে এই প্রথম নয়, ২০০৭ সালে ৮.০ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল লাতিন আমেরিকার দেশ পেরুতে। ৫১৯ জন পেরুভিয়ানের মৃত্যুর পাশাপাশি দেশটার দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চল তচনচ করে দিয়েছিল এই প্রাকৃতিক র্দুযোগ। তুলনামূলক কম মাত্রার হলেও হাইতির ভূমিকম্প যে আরও ধ্বংসাত্মক ছিল তা বিশ্বাষ করার যথেষ্ট কারণ আছে। রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের ১০ মাইলের মধ্যেই ছিল এর এপিসেন্টার, যার কারণে ধ্বংসের তান্ডব অতীতের অনেক রেকর্ডই ভাংগতে যাচ্ছে। আর্ন্তজাতিক সংস্থাগুলো প্রস্তাব করছে ৯ মিলিয়ন জনসংখ্যার এই দেশটাকে দ্রুত ও সঠিকভাবে পুনগঠন করতে চাইলে পুরো দেশটাকেই সাময়িকভাবে প্রতিবেশী এস্পানিওয়ালা অথবা ডমিনিকান রিপাবলিক দ্বীপে সড়িয়ে নিতে হবে। অবস্থা কতটা ভয়াবহ হলে এমন একটা প্রস্তাব আসতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। একদিকে প্রাকৃতিক র্দুযোগ সাথে সীমাহীন র্দুনীতি দেশটাকে পশ্চিম গোলার্ধের সবচাইতে গরীব দেশ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। হাইতির মোট জনসংখ্যরা শতকরা আশি ভাগ মানুষ দারিদ্র সীমার নীচে বাস করে। দেশটায় প্রতি বছর আঘাত হানে ক্যারাবিয়ান সমুদ্রের হারিকেন। হাইতির এই র্দুদিনে বিশ্ব সম্প্রদায় যে ভাবে এগিয়ে আসছে আমরা ধরে নিতে পারি এর জনগণ কাটিয়ে উঠবে এ র্দুযোগ।
হাইতির সাথে বাংলাদেশের বেশ কতগুলো বিষয়ে আর্শ্চয্য রকম মিল আছে, যার মধ্যে অন্যতম র্দুনীতি। বিশ্ব র্দুনীতির চ্যাম্পিয়নশীপে এ দুটি দেশ অনেকদিন ধরে একে অপরের প্রতিদন্ধি। কি হবে যদি বাংলাদেশের ঢাকা শহর অথবা অন্য কোন জনবহুল শহরে ৭.০ ম্যাগনিচুডের ভূমিকম্প আঘাত হানে? এ লাইনের বিশেষজ্ঞরা বলেন, ৭.০ দরকার হবেনা, কাছাকাছি এপিসেন্টার সহ ৫-৬ মাত্রার ভুমিকম্পই বাংলাদেশকে ধ্বংসস্তূপে পরিনত করতে যথেষ্ট। প্রাণহানীর সংখ্যা কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে হিসাব করা হচ্ছে। এমন একটা ভয়াবহ চিত্র আজকের দিনে বাংলাদেশের জন্যে অবিশ্বাষ্য কোন কল্পনা নয়। ঢাকা সহ বাংলাদেশের অনেক শহরেই ছোটখাট ভূমিকম্প এখন নিত্যদিনের সংগী। পন্ডিতরা বলছেন, বাংলাদেশের একটা বিশাল এলাকা বড় ধরনের ভূমিকা জোনে অবস্থান করছে। এবং এসব এলাকায় বড় মাপের ভূমিকম্প আঘাত হানলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান যা দাঁড়াবে তা হবে সভ্যতার ইতিহাসে সব চাইতে ভয়াবহ, লৌমহর্ষক এবং হ্রদয় বিদারক।
ভূমিকম্প মোকাবেলার কার্য্যকরী প্রযুক্তি এখন পর্য্যন্ত আবিস্কৃত হয়নি, নিকট ভবিষতে তা হতে যাচ্ছে তাও মনে হয়না। কিন্তূ এর ধ্বংসলীলা কমিয়ে আনার সচেতনতা বাড়ছে পৃথিবী জুড়ে। এ উদ্দেশ্যে দেশে দেশে আরোপিত হচ্ছে চাহিদা পরিপূরক নির্মান কোড। নিশ্চিত করা হচ্ছে আপদকালীন সময়ে বিভিন্ন সংস্থার সমন্নয়, জন্ম নিচ্ছে সোস্যাল নেটওয়ার্ক। অতিরঞ্জিত হবেনা যদি বলা হয় বাংলাদেশ এ দৌড়ে অনেকটা পিছিয়ে আছে। জনসংখ্যার ভয়াবহ বিষ্ফোরন দেশটার আবাসন সমস্যায় এনে দিয়েছে এমন এক মাত্রা, যার সাথে আধূনিক বিশ্বের বিশেষ কোন পরিচয় আছে বলে মনে হয়না। হাইতির ভূমিকম্প এ দিক হতে আমাদের জন্যে ওয়েক-আপ কল হিসাবে কাজ করতে পারে।
সচেতনতা ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার অভাবে ভূমিকম্পের ধ্বংসযজ্ঞ কতটা ভয়াবহ হতে পারে হাইতির সাম্প্রতিক ভূমিকম্প তার জ্বলজ্যান্ত উদাহরন। শিক্ষা নিতে চাইলে হাইতি ট্রাজেডি আমাদের জন্যে ভাল উদাহরন হিসাবে কাজ করতে পারে।