১৯৭৫ সালের ২৫শে জানুয়ারী বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি আলোচিত দিন। এ দিনে শাষনতন্ত্রের ৪র্থ সংশোধনীর মাধ্যমে প্রেসিডেন্টসিয়াল সরকার পদ্বতি সহ একদলীয় শাষন ব্যবস্থার পথ উন্মূক্ত করেন তৎকালিন সরকার প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান। এ সংশোধনীর পথ ধরেই পরবর্তীতে জন্ম নেয় বাকশাল নামের শক্তিশালী দল। এই বাকশালকে ঘিরে বাংলাদেশের পদ্মা, মেঘনা, যমুনা সহ বহু নদীর পানি ঘোলা করা হয়েছে, এবং ঘোলা পানিতে লাভজনক মাছ শিকার করে অনেকেই গড়ে নিয়েছেন নিজদের পেট ও পকেটের নিশ্চয়তা। বাকশাল নামের যে শিশুর আতুড় ঘরেই মৃত্যু হয়েছিল তাকে আবর্তন করে অদ্যাবদি চলছে রাজনৈতিক মেরুকরন। '৭৫এর ১৫ই আগষ্ট দেশের অবিংসবাদি নেতা শেখ মুজিবর রহমানকে সরপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে বহুদলীয় গনতন্ত্র উদ্বার করা গেছে, এমন একটা ফিলসফির উপর দ্বিখন্ডিত হয়েছে বাংলাদেশের সমসায়িক রাজনীতি। এই ১৫ই আগষ্টকে ভীত বানিয়ে দেশের উর্দিওয়ালা জেনারেলের দল ক্ষমতা লোভের লালসাকে বৈধতা দিয়েছে নিজদের জড়ায়ুতে জন্ম দেয়া কথিত বহুদলীয় গনতন্ত্রের মাধ্যমে।
কি দিয়েছে এই বহুদলীয় গনতন্ত্র? অন্ন? বস্ত্র? চিকিৎসা? সূশিক্ষা? আইনের শাষন? স্বাভাবিক জন্ম-মৃত্যুর নিশ্চয়তা? বাকশাল পক্ষের আর বিপক্ষের সবাই একবাক্যে স্বীকার করবেন এর কোনটাই না। তা হলে প্রশ্ন জাগে, বহুদলীয় গনতন্ত্র কেন এবং কাদের জন্যে? স্বাধীনতা যুদ্বের সড়াসড়ি বিরোধীতাকারী মাওলানা নিজামীর গাড়িতে পতাকা উত্তলনের জন্যেই কি প্রয়োজন ছিল বহুদলীয় গনতন্ত্র? সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও তার পরিবারের দফায় দাফায় দম্ভোক্তি নিশ্চয়তা করার জন্যেই কি প্রয়োজন ছিল '৭৫এর হত্যাকান্ড? হয়ত সড়াসড়ি এর কোন উত্তর নেই, কিন্তূ তারপরও আমাদের গনতন্ত্রের জয়গান গাইতে হবে, কারন এই গনতন্ত্রই আমাদের উপহার দিয়েছে লুৎফুজ্জামান বাবরের মত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পিন্টুর মত সাংসদ, জয়নাল হাজারীর মত জনপ্রতিনিধি।
বাকশাল নামের এক দলীয় শাষনব্যবস্থার ভবিষৎ কি ছিল তা এ মুহুর্তে বলা হয়ত সম্ভব হবেনা। কিন্তূ সমান্তরাল টানতে আমরা যদি চীন এবং ভিয়েৎনামের মত দেশগুলোর উদাহরন বিবেচনা করি তাহলে একটা জিনিষ পরিস্কার হবে, তৃতীয় বিশ্বের চরিত্রহীন দেশগুলোর অর্থনৈতিক বুনিয়াদ মজবুত করায় প্রয়োজন সাংস্কৃতিক বিপ্লব। এ ধরনের বিপ্লব ছাড়া সামসাময়িক কালের একজন বাংলাদেশীর চরিত্রে পরিবর্তন আনার দ্বিতীয় কোন পথ খোলা আছে কিনা তা বহুদলীয় গনতন্ত্রের পূঁজারীরাও বলতে পারছেন্না।
আমাদের ইতিহাসে বাকশাল পর্বকে যারা কালো পর্ব আখ্যায়িত করে পান্ডিত্য প্রকাশ করেন তাদের সাথে দ্বিমত করতে চাই। আপনারা বহুদলীয় গনতান্ত্রিক শাষনের মাধ্যমে নিশ্চিত করুন আইনের শাষন, অবসান ঘটান ব্যক্তিতন্ত্র, পরিবারতন্ত্র। তাহলে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যাবে বাকশালকে। তার আগে বাকশাল আর বহুদলীয় গনতন্ত্র নিয়ে লাগামহীন মাতম কেবলই অর্থহীন মনে হবে। অন্তত আমার মত সাধারন মানুষের কাছে।