বাংলাদেশের রাজনীতিতে চমৎকার একটা ঐতিয্য চালু আছে যা নিয়ে আমার মত ম্যাংগো পিপলরা গর্ব করতে পারে। নেতা-নেত্রী আর পিতা-ঘোষক পছন্দ নিয়ে রাজনীতির মাঠকে যতই কান্দু পট্টির গলি বানানো হোক না কেন, দিন শেষে এ গলির খেলোয়াড়েরা সবাই একে অপরের আপন জন। অবাক হইনা যখন দেখি আওয়ামী লীগের অন্যতম অর্থ যোগানদাতা সালমান খাঁ এন্ড গং ৭১’এর নরপিচাশ ফকা চৌধুরীর সন্তান সাকা চৌধুরী গংদের ব্যবসায়িক পার্টনার। শেখ পরিবারের অন্যতম প্রতিনিধি ফজলুল করিম সেলিম এই কিছু দিন আগে বেয়াই-বেয়াই সম্পর্ক তৈরী করলেন জোট সরকারের কথিত বিদ্যুৎ ডাকাত টুকু মিয়ার সাথে (বলা হয়ে থাকে এই জোটের কারণেই নাকি হাফমন্ত্রী সোহেল তাজের পতন হয়েছিল)। শোনা যায় শেখ কন্যা হাসিনা নিজেও নাকি ক্ষমতার স্বাদ মসৃন করতে এক সময় গোলাম আজমের ব্লেসিং নিতে হুজুরের দরবার শরীফে তশরিফ ফরমায়েছিলেন। এ প্রসংগে আমাদের আপোষহীনা নেত্রীর সাম্প্রতিক ছোটখাট একটা আপোষকামীতার কথা উল্লেখ না করলে অন্যায় হবে নিশ্চয়। মহাশয়া উনার এক ল্যাফটেনেন্টের বিয়েতে গিয়েছিলেন আশির্বাদ করবেন বলে। সমস্যা হল, এই ল্যাফটেনেন্ট গেল সপ্তায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া তোঘলকী কারবারের অন্যতম ফেরারী আসামী। বিয়ের আসরে যদিও পুলিশের কোন কমতি ছিলনা, কিন্তূ এমন একটা শুভ কাজে বন্ধুত্ব আর বুঝাপরার যে মৃদুমন্দ বাতাস বইছিল তা হতে কেউ কাউকে বঞ্চিত করতে চাইছিলনা। পুলিশ দেখেও দেখলনা, আর আপোষহীনা জেনেও জানলেন্না। এক কথায়, ধন্য হল পারস্পরিক বুঝাপরা, ধন্য হল চীর বৈরীতার রাজনীতি। যাই হোক, আমার লেখার মূল থীম এটা নয়। আসছি সে প্রসংগে।
ভোটযুদ্বে ক্ষমতা হারিয়ে পরাজিত দল নিয়মিত সংসদে গেছে এমন সাংস্কৃতি আমাদের রাজনৈতিক অংগনে অচল। আর যাবেই বা কেন, কথা বলতে দেয়া হয়না, সামনে বসতে দেয়া হয়না, আলীশান সব টেন্ডার হচ্ছে তার ধারে কাছেও ঘেঁষতে দেয়া হয়না! পেট আর পকেট বলে দু’টা জিনিষ আছে, এগুলোর সেবা না করতে পারলে কিসের সংসদ আর কিসের এমপিগীরি! ক্ষমতাসীন দলও বুঝে এই হাহাকার, কারণ তারাও এ পথ মাড়িয়েছে খুব করুনভাবে। সমস্যা হচ্ছে, সংসদে ক্ষমতাওয়লা আর ক্ষমতাহারা দুই দলকে না দেখলে উপরওয়ালা গুরুরা গোস্বা করেন, টাকা-পয়সা দিতে টালবাহানা করেন। তাই নেহাত না আনলেই নয় এমন একটা তাগাদা হতেই ক্ষমতাওয়ালারা চেষ্টা করছেন প্রতিপক্ষকে সংসদে ফেরাতে। সামনে সাড়িতে আসন অফার করেও কাজ হচ্ছেনা (চান্দুদের চেহারা না দেখলে ম্যাংগো পিপলদের নাওয়া খাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে আরকি!), ঘন ঘন অনুনয় বিনয়েও বরফ গলছেনা। তেতো মুখের মানুষেরা বলছে অন্য কথা, এদের ফিরিয়ে আনার জন্যেই নাকি সাংসদ্দের সামনে বিনা শুল্কে গাড়ি আমদানীর টোপ ফেলা হয়েছে। ক্ষুধার্ত কুকুরের সামনে মাংসের টুকরা ঝুলালে যে গতিতে দৌঁড়ে আসার কথা, একই গতিতে ক্ষমতাহারা সাংসদরাও গাড়ির জন্যে দৌঁড়ে আসবেন এমনটাই আশা করছেন ক্ষমতাওয়ালারা। মনে হচ্ছে কাজ দিয়েছে এই টোপে, সংবাদ মাধ্যমে খবর বেরিয়েছে গণতন্ত্রের 'সূর্য্যসন্তান’ সর্বজনাব সাকা চৌধুরী ইতিমধ্যে ঘোষনা দিয়েছেন, ‘মোকাবেলার জন্যে তৈরী থাকবেন, আমরা আসছি’ (আসলে মোকাবেলা নয়, হবে ভাগাভাগি)। ৪০০ কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়ে সোনার সন্তানদের জন্যে গাড়ি ব্যবস্থা হচ্ছে, ম্যাংগো পিপলদের এ নিয়ে কেন মাথা ব্যথা তা নন-ম্যংগোদের বোধগম্য হওয়ার কথা নয়। শুধু ৪০০ কোটি কেন, পূরো দেশটাই যদি সাংসদরা নিজদের ভেতর ভাগাভাগি করে জাতিকে অনিশ্চয়তার হাত হতে রেহাই দেন কেউ বাধ সাধবে বলে মনে হয়না। ম্যাংগো পিপলদের সময়মত ম্যাংগো সাপ্লাই দিলেই তারা খুশি। তাদের কাছে নেংড়া-ফজলী হিসাবই আসল হিসাব, ৪০০ কোটির হিসাব অনেকটা দিল্লীকা লাড্ডু হিসাবের মত।
কোটি টাকা শ্রাদ্ব করে নির্বাচনী বৈতরনী পার হয়ে যারা সংসদে আসেন ব্যবহারের জন্যে উনাদের গাড়ি থাকেনা, এমন একটা তথ্য ম্যাংগো পিপলদের বেওয়ারিশ কুকুরদেরও বিশ্বাষ করতে কষ্ট হবে। এমন কাউকে পাওয়া গেলে গুলিস্তান চত্ত্বরে মুর্তি বানিয়ে রাখলে অবশ্য মন্দ হয়না (ভবিষত প্রজন্মের জন্যে যাদুঘরীয় সম্পদ)। ম্যাংগো গণনার হালির মতই হিসাব করলে দেখা যাবে প্রায় ১০০ হালি সাংসদ শুল্ক বিহীন গাড়ি আমদানীর সূযোগ নেবে। সরকারী হিসাবেই এতে ৪০০ কোটি টাকা ভর্তুকী যাবে। খরচের এখানেই শেষ নয়, গাড়ি প্রতি মাসে ৪০ হাজার টাকা দেয়া হবে আনুসাংগিক খরচ হিসাবে। ৪০০ x ৪০,০০০! ১কোটি ৬০ লাখ টাকা মাসে। এ আর এমন কি অংক? নেত্রী বন্দনার কাজে গ্রামে গঞ্জে চষে বেড়াতে এ সবের প্রয়োজন আছে নিশ্চয়!
এই গাড়ি গাড়ি খেলায় সাংসদদের কম খেসারত দিতে হয়নি বিদায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। তদন্তে বের হয়ে এসেছে গণতন্ত্রের এই মহাসেনারা শুল্কহীন গাড়ি আমদানীর পর তা মোটা অংকের লাভে বিক্রী করে দেন ডিলারদের কাছে। কারণ এই ডিলাররাই যে আমদানী পূঁজির যোগানদাতা! অনেকে আবার হজম করতে না পেরে ময়লা আবর্জনা ফেলার মত গাড়িও ফেলে দিয়েছিলেন ঢাকার রাজপথে। ঢাকা শহর এমনিতেই ধুঁকছে অপরিকল্পিত যানবাহন চলাচলে, অতিরিক্ত ৪০০ গাড়ি এই অব্যবস্থায় নতুন ঝামেলা যোগ করবে তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। তাই সরকার মহাশয় যদি সাংসদ্দের বিনাশুল্কে হেলিকপ্টার আনার ব্যবস্থা করে দিতেন তাহলে আমার মত কোটি কোটি ম্যাংগো পিপল কিছুটা হলেও ট্রাফিক হাংগামা হতে রেহাই পেত। আশাকরি হেলিকপ্টার কেনার মত যৎ সামন্য কিছু টাকা সাংসদদের হাড়ি-পাতিল নাড়া দিলেই বেরিয়ে আসবে।