ধারণাটা আগের একটা লেখাতেও প্রকাশ করেছিলাম, কাজ হয়নি, পাঠকদের গেলানো যায়নি যেভাবে চাইছিলাম। স্থান, কাল ও চাহিদার কথা ভেবে নতুন করে পানি ঢালতে সাহস করছি পুরানো বোতলে। ব্যাপারটা দেশের সমসাময়িক রাজনীতিতে নাম বদলের পালাগান নিয়ে। আগের সরকারের মত এ সরকারও ভাল করে ডানা মেলার আগেই গাইতে শুরু করে দিল সেই পরিচিত গান, "এ দেশের যা কিছু সব আমার পিতার, এতদিন যারা ভোগ-দখল করে আসছিল এবার তাদের বিদায়ের পালা"। শোনা যায় বিদায় তালিকা হতে কবর পর্যন্ত রেহাই পাচ্ছেনা। পালাগানের শুরুটা রাস্তাঘাট, হাসপাতাল, গরুরহাট ও খেলার মাঠের মত ইন্সিগনিফিকেন্ট স্থাপনাগুলো দিয়ে শুরু যা গণশৌচাগার পর্যন্ত গড়াতে বিশেষ লজ্জা ও সময় লাগেনি। যেহেতু দেশের সর্বোচ্চ আদালত শাষনতন্ত্রের ৫ম সংশোধনী অবৈধ ঘোষনা করেছে, তাই অবৈধ হয়ে গেছে বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের শাষনামল ছাড়া বাকি সব শাষনামল। সুতরাং তালিকা করে অবৈধ ঘোষনা করে হল ’অবৈধ’ শাষনের নেতা-নেত্রীর নামে জাতীয় স্থাপনা সমূহের নামকরন। এর আগেও একই পালাগান গেয়ে জনৈকা স্ত্রী ঘোষনা দিয়েছিলেন, ‘এ দেশের যা কিছু আছে সবই আমার স্বামীর, অবৈধ ভোগ দখলকারীদের এবার উৎখাতের পালা‘। বলতে দেরী কিন্তূ বাস্তবায়নে দেরী হলনা। রাতারাতি বদলে গেল কলেজ, হাসপাতাল, রাস্তাঘাট, সেতু ও পয়ঃনিস্কাসন সহ তাবৎ স্থাপনার নাম সমূহ। জাতি ধন্য হল ঘন ঘন নামবদলের ঐতিহাসিক স্বাক্ষী হতে পেরে।
যেহেতু গণতান্ত্রিক শাষন ব্যবস্থায় ক্ষমতা চীরস্থায়ী কোন ম্যান্ডেট নয়, আমরা ধরে নিতে পারি ক্ষমতার পালাবদলও রূপকথার অলীক কোন গল্প নয়। শুধু গবেষনার কারণে ধরে নিলাম আগামী নির্বাচনে পিতার মালিকানা কেড়ে স্বামীর মালিকানা ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হল অভাগা জাতি। সন্দেহ নেই স্বামীর মালিকানায় নিয়োগপ্রাপ্ত উচ্চ আদালতের বিচারকগনও মহাসমারোহে ৫ম সংশোধনী ফিরিয়ে দিয়ে নিজদের ধন্য করবেন। বৈধতা পেয়ে আবারও নাম বদলের পালাগানে ফিরে যাবে স্বামীর দল। জাতিও নতুন করে স্বাক্ষী হবে পরিবর্তনের ঐতিহাসিক মুহুর্তের। এমনও হতে পারে ৫ বছর অন্তর অন্তর পিতা ও স্বামীর দল পালাবদল করে ক্ষমতার স্বাদ গ্রহন করছে। ঘন ঘন জাতীয় স্থাপনা সমূহের নাম পরিবর্তন খুবই উচ্চমূল্যের প্রকল্প, যার দাম পরিশোধ করতে হয় সেই অভাগা ম্যাংগো পিপলদেরই। এ হতে উত্তরনের বৈজ্ঞানিক উপায় বের করার আগ পর্যন্ত আমি নিজে একটা বাবুরহাটীয় প্রস্তাব করছি।
নির্বাচন কমিশন হতে পারে এ ব্যাপারে কার্য্যকরী যন্ত্র। ধারণাটা খুবই সোজা; নাম পরিবর্তনের সাংস্কৃতিকে আইনগতভাবে স্বীকৃতি দিতে হবে। নির্বাচনী কর্মসূচী হিসাবে প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে আগ বাড়িয়ে ঘোষনা দিতে হবে ক্ষমতায় গেলে দলটি কোন স্থাপন সমূহের নাম পরিবর্তন করার পরিকল্পনা করছে। সাথে জমা দিতে হবে প্রকল্প বাস্তবায়নের সমপরিমান অর্থ। যারা প্রয়োজনীয় অর্থ জমা করতে ব্যর্থ হবে তারা হারাবেন নাম পরিবর্তনের অধিকার। এমন একটা আইন প্রয়োগ করা গেলে দেশে তৈরী হতে পারে বেশ কিছু বিনিয়োগযোগ্য প্রকল্প, সাথে কর্মসংস্থানের আওতায় লাভবান হতে পারবে বেশ কিছু বেকার স্বদেশী। ’সরকার কা মাল দরিয়া মে ঢাল’ এ জাতীয় বেনিফিট নিয়ে আমাদের রাজনীতিবিদ্দের উদর এমনিতেই স্ফীত হয়ে আছে, নাম পরিবর্তনের হা ডু ডু খেলা প্রবর্তন করা গেলে স্ফীত উদরের মেদ কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব হবে।
পিতা ও স্বামীর নাম অমর করে রাখার যুদ্ব ম্যাংগো পিপলদের জন্যে হতে পারে খুবই লাভজনক ও এন্টারটেইনিং যুদ্ব যদি এর জন্যে পরিশোধ করা হয় যথাযত মূল্য। তাই আসুন স্বাগত জানাই নাম পরিবর্তনের বাংলাদেশীয় রাজনীতিকে।