২১শে ফেব্রুয়ারী মধ্যরাতে এ নাটক মঞ্চস্থ হয় প্রতি বছর। ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকলে হাতী ঘোড়া বাঘ ভাল্লুক সাজিয়ে আলোকিত করতে আসেন শহীদ মিনার। দন্তহীন বাঘ ভল্লুক পরিবেষ্টিত ক্ষমতাহারা দলের নেত্রী আসেন কিছুক্ষন পর । টিভি, রেডিও সহ ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার শত শত সাংবাদিক প্রচার মাধ্যমের সর্বশেষ প্রযুক্তি নিয়ে চাতকের মত অপেক্ষায় থাকেন নেত্রীদ্বয়ের আগমনে। সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে উনারা আসনে। ফ্লাশ লাইটের আলোয় ঝলমল করে উঠে শহীদ মিনারের পাদদেশ। পাতি-চামচা, উপ-চামচা আর ছটাক-চামচার দল বাঁদরের মত লাফালাফি শুরু করে দেয় নেত্রীদ্বয়ের কাছাকাছি যাওয়ার। শহীদ মিনারে নেত্রী শ্রদ্বাঞ্জলী দিচ্ছেন, এমন একটা বিরল মুহুর্তে নেত্রীর সাথে ছবি তোলাকে জীবন মরণ চ্যালেঞ্জ হিসাবে নেয় চামচার দল ! এ যেন ক্ষমতার রাজনীতিতে অপরিচ্ছেদ্য অংশ। হয়ত এর উপর নির্বাচনী মনোনয়ন সহ নির্ভর করে অনেক কিছু। অথচ উপলক্ষটা ৫২’র ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্বা নিবেদন। উপরের ছবিটা কি তাই বলে?
২১শে ফেব্রুয়ারীর মধ্যরাতে ঘটা করে শহীদ মিনারে শ্রদ্বাঞ্জলী নিবেদন করলেই ৫২’র শহীদদের প্রতি সন্মান ও শ্রদ্বা নিবেদনের মিশন সম্পূর্ণ হয়ে যায়, এ ধরনের সাংস্কৃতির সাথে ঘোর বৈরীতা আমার। কিন্তূ হাজার বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে হ্রদয়ের টানে যারা মধ্যরাতে শহীদ মিনারে ছুটে যান তাদের আন্তরিকতাকে সন্মন জানাইনা এমনটা বলা মিথ্যা বলা হবে। খুব ছোট হতেই দেখে আসছি হাতে ফুল, নগ্ন পা আর মুখে ২১শে ফেব্রুয়ারীর অমর সংগীত সহ জনতার ঢল এগিয়ে যাচ্ছে শহীদ মিনারের দিকে। রাজনীতির খয়ের খাঁ আর নেত্রী পূঁজার সেবাদাস আর এ গনির কি জানা ছিলনা ৫৮ বছর ধরে লালিত স্বদেশীদের এ গর্বিত সাংস্কৃতি? জানা ছিল নিশ্চয়, কিন্তূ সমস্যা হল উনি ৫২’র শহীদদের প্রতি শ্রদ্বা জানাতে ওখানে যান্নি, গিয়েছিলেন নেত্রীর সাথে ভাল একটা ছবি তুলতে। হয়ত জুতা খোলার পর্বটা মাথায় আসেনি অথবা তাগাদা অনুভব করেন্নি।
সমাজে এ ধরনের মাংকিদের অবাধ চলাফেরা নিশ্চিত থাকলে এভাবেই পদদলিত হতে থাকবে আমাদের হাজার বছরের ধ্যান, ধারণা, সভ্যতা আর সাংস্কৃতি। সামনের ২১শে ফেব্রুয়ারী পালনের আগে এ দিকটায় চোখ ফেরানোর জন্যে সবাইকে অনুরোধ করব।