ইউরি ছিল আমার প্রথম রুশ বন্ধু। ছয় ফুট লম্বা আর ৩০০ পাউন্ড ওজনের একজন মানুষ এত হাসিখুশি হতে পারে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। প্রথম দিনের ক্লাসে বিদেশিদের দেখে রুশ ছাত্রদের প্রায় সবাই কেমন ভড়কে গেল। কোথা হতে শুরু করতে হবে কেউ আন্দাজ করতে পারছিলনা। ইউরি ছিল এর ব্যতিক্রম। পরিচয় পর্ব শেষ হতে বত্রিশ দাঁত বের করে এগিয়ে এলো আমাদের দিকে। কোন ভণিতা না করে খাঁটি রুশ ভাষায় বাপ-মা তুলে একটা গালি দিয়ে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিল। আমরাও তা লুফে নিলাম বিনা শর্তে। সবার সাথে বন্ধুত্বের সাঁকো তৈরি করতে অন্যতম ভূমিকা রাখল ইউরি। ছয় মাস না ঘুরতে ক্লাসে দেশি বিদেশী বলে কোন কিছুর অস্তিত্ব রইলনা। একদিন ক্লাস শেষে কম্পাসের মূল ফটকে ইউরিকে দেখলাম কাকে যেন খুঁজছে। আমাকে দেখে এগিয়ে এলো এবং হো হো করে উচ্চ হাসিতে জানালো আমারই জন্য অপেক্ষা করছে। কারণ জিজ্ঞেস করতে জানালো সামনের উইক-এন্ডে আমাকে এক জায়গায় দাওয়াত করতে চায়। উপলক্ষ, বিয়ে। বিয়ে করতে যাচ্ছে ইউরি। স্কুলের সুইট হার্ট তার হবু স্ত্রী। আমি সানন্দে গ্রহণ করলাম তার নিমন্ত্রণ। পূর্ব ধারণা না থাকায় তার কাছে কিছুটা ধারণা নিলাম রুশ বিয়ের উপর। যাবার সময় রহস্যময় হাসি দিয়ে ইঙ্গিত দিল, ঐ দিন পকেটে কনডম রাখতে যেন ভুলে না যাই।
রুশ বিয়ে মানেই নেশা করা। যার বিয়ে সে তো বটেই, সাথে তার মা-বাবা, শ্বশুর শাশুড়ি সবাই মিলে যোগান দেয় ট্র্যাডিশনাল রুশ ভদকা, ঘরে তৈরি সামাগন, বিয়ার ও ওয়াইন। প্রায়ই দেখা যায় বোতলের আয়োজন তলিয়ে গেছে খাবারের আয়োজন। এটাই রুশ সংস্কৃতি। এভাবেই ওরা বেড়ে উঠে। এ নিয়ে কোথাও কারও অভিযোগ নেই। বরং অভিযোগ উঠে যদি বোতলের আয়োজনে অপ্রতুলতা দেখা দেয়। দামি এক বোতল ব্রান্ডি নিয়ে আমিও যোগ দিলাম আসরে (উপহারের পছন্দটা ইউরির নিজের)। সংক্ষিপ্ত পোশাকের চোখ ধাঁধানো বেশ কজন সুন্দরী আমাকে সাদর সম্ভাষণ জানালো ট্র্যাডিশনাল রুশ বিয়েতে। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত বাড়ার সাথে সাথে জমে উঠলো আসর। থেমে থেমে টোষ্ট হতে থাকলো। সবাই শুভেচ্ছা জানালো নব বিবাহিতদের। একমাত্র বিদেশি হিসাবে আমাকে দেয়া হল ভিআইপি ট্রিটমেন্ট। এক ফাঁকে ইউরি কানে কানে বলে গেল সুন্দরীদের বেশ কজনের সাথে তার কথা হয়েছে। চাইলে তাদের একজনকে সারা রাতের সঙ্গী বানাতে পারি। নাচের আসরে প্রায় সবাইকে দেখলাম এলোমেলো পা ফেলছে। মাতলামি পর্ব শুরু হয়েছে কেবল। এরপর শুরু হবে সংঘর্ষ পর্ব। মদ ও মেয়ে মানুষ নিয়ে ওরা মারামারি করবে। হয়ত রুশ মিলিশিয়াও হাজির হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এমনটাই ধারণা দিয়েছিল ইউরি। বিদেশি হিসাবে অনেক কিছুতে জড়ানোর অধিকার ছিলনা আমাদের। তাই রাত দুটার দিকে বিদায় নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। কিন্তু কোথাও খুঁজে পেলাম না ইউরি ও তার নববধূকে। অগত্যা কাউকে কিছু না বলেই বেরিয়ে এলাম।
সোমবারের ক্লাসে ইউরিকে না দেখে অবাক হলাম না। ভাবলাম হয়ত হানিমুনে গেছে। সপ্তাহ ঘুরে আরও একটা সপ্তাহ ঘুরে গেল। ইউরির দেখা নেই। প্রায় এক মাস পর ফিরে এলো সে। এবং ফিরে যে কাহিনীর বর্ণনা করলো তাতে মাথা ঘুরে গেল। তাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে। তাই ফিরতে কিছুটা দেরী হয়েছে। কারণ আর জিজ্ঞেস করতে হলোনা, সে নিজেই হর হর করে বলে গেল। বিয়ের রাতে ভয়াবহ রকমের দুর্ঘটনা ঘটেছিল। অন্যদের মত সে নিজেও এতটা মাতাল ছিল বাসর রাতে কাকে নিয়ে বিছানায় গিয়েছিল হুশ ছিলনা। সকালে দেখা গেল তার পাশে শুয়ে আছে তার খালা শাশুড়ি। নববধূর হুশ ফিরতেই আবিষ্কার করলো রাতের মিসহ্যাপ। এবং সূচিত হল বিয়ের শেষ পর্ব, ডিভোর্স।