অ্যালেক্সান্ডার কিরিলভ ওরফে অ্যালেক্স লেজলির দেশ রাশিয়া এবং সে একজন ফ্রি সেক্স প্রবক্তা। তার ভাষ্য মানলে এ পৃথিবী হবে সীমাহীন, বাধাহীন সেক্স-ভূমি। এ নিয়ে তার প্রচারণার শেষ নেই। ঘুরে বেড়ান দেশ হতে দেশান্তরে। সাথে থাকে একদল ঝকঝকে পূর্ব ইউরোপিয়ান তরুণী। থাইল্যান্ডে এই গ্রুপকে কারা আমন্ত্রণ জানিয়েছিল তার কোন প্রকাশিত প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে বালাই বাহুল্য অ্যালেক্সের ট্যুইষ্টেড চিন্তাভাবনা সঙ্গী ও সহযোগী খুঁজলে পৃথিবীর অনেক দেশেই পাওয়া যাবে। বিশেষ করে থাইল্যান্ডের মত দেশে। তো এ যাত্রায় কিরিলভের সঙ্গী হিসাবে আরও অনেকের সাথে ছিল ২১ বছর বয়সী বেলারুশ সুন্দরী আনাস্তাসিয়া ভাসুকেভিচ, ওরফে নাস্তাইয়া রিবকা। অবৈধ কার্যক্রমের অভিযোগ এনে কিরিলিভের গোটা দলকে গ্রেফতার করে থাই পুলিশ। নাস্তিয়ার দাবি সে ওদেশে গেছে রুশ পর্যকদের সেক্স কোচ হিসাবে। ক'দিন বন্দী রাখার পর ওদের সবাইকে ছেড়ে দেয় দেশটার পুলিশ। তবে এটাই তাদের শেষ হেনস্তা ছিলনা। মুক্তি পাওয়ার কদিন পর আবার নাস্তইয়াকে আটক করা হয় পতিতাবৃত্তির অভিযোগ।
নাটকের প্রথম অংক এখানেই শুরু। পুলিশ কাস্টেডিতে সাংবাদিকদের সামনে ভাসুকেভিচ এমনকিছু বক্তব্য প্রকাশ করেন যা আটলান্টিকের বিপরীত মেরুর দেশ রাশিয়া ও আমেরিকায় বোমা ফাটায়। ফলে নড়েচড়ে উঠে রাশিয়ার ক্ষমতাসীন চক্র। এই বেলারুশ পতিতার দাবি তার কাছে এমন সব তথ্য আছে যা প্রমাণ করবে মার্কিন নির্বাচনে রুশদের হস্তক্ষেপের এফবিআই'এর দাবি।
ওলেগ দেরিপাস্কা রুশ দেশের ডেরজিনস্ক'এ জন্ম নেয়া ৫১ বছর বয়সী ব্যবসায়ী। রুশ স্বৈরশাসক পুতিনের ঘনিষ্ঠদের একজন। সাফল্যের মাপকাঠিতে দাড়করালে.৪.৪ বিলিয়ন ডলারের মালিক। আর দশটা ধনী ব্যবসায়ীর মতই তার বিলাসবহুল জীবন। ব্যবসা করেন এবং পাশাপাশি নিজের মিলিয়ন ডলারের ইয়টে করে ঘুরে বেড়ান এক উপকুল হতে অন্য উপকুলে। থাইল্যান্ডে আটক বেলারুশ যৌনকর্মী আনাস্তাসিয়ার দাবি কোন এক সমুদ্র যাত্রায় তাকে ভাড়া করেছিল ওলেগ দেরিপাস্কা। এবং ঐ যাত্রায় তাদের সহযাত্রী ছিল এমন ক'জন যারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা আলাপ করেছিল মার্কিন নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের পরিকল্পনা। আনাস্তাসিয়ার আরও দাবি তার কাছে প্রমাণের জন্যে আছে ১৬ ঘণ্টার অডিও রেকর্ডিং এবং ধারণকৃত অনেক ভিডিও। জনসমুঙ্খে এসব প্রমাণের আগে তার ছিল একটাই দাবি, থাই জেল হতে মুক্তি ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাজনৈতিক আশ্রয়। ট্রাম্প প্রশাসন এ দাবিতে কান দেয়নি নিজের স্বার্থে। অপর দিকে রুশ ধনাঢ্য মাফিয়া ওলেগ দেরিপাস্কা উড়িয়ে দেন এসব অভিযোগ। অভিযোগের পরপরই বিস্ফোরিত হয় নতুন বোমা। রুশ দেশের বিরোধী দলীয় নেতা অ্যালেক্সেই নাভালনি ইউটিউব ও ইনষ্টিগ্রামে এমন কিছু ভিডিও ও ছবি প্রকাশ করেন যা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করে ওলেগ দেরিপাস্কার সাথে ঐ ট্রিপে নাস্তায়ার উপস্থিতি। শুধু তাই নয়, যৌণকর্মী সহ ঐ ইয়টে আরও ছিলেন রুশ মন্ত্রীসভার ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী সের্গেই প্রিখদকো। পুতিন স্বৈরশাসণের গদি কিছুটা হলেও নড়ে উঠে। দেরিপাস্কা ও প্রিখদকো দ্রুত দ্বারস্থ হন দেশটার আদালতে। দাবি জানান নাভালনির সোশ্যাল মিডিয়ার সব লিংক অকেজো করে দেয়ার জন্যে। আদালত একধাপ এগিয়ে গোটা ইউটিউব ও ইন্সটিগ্রাম অকেজো করে দেয়। নাভালনিকে ছুড়ে ফেলা হয় জেলখানায়।
ওদিকে থাইল্যান্ডের জেলে আটক আন্সতাসিয়াকে নিশ্চয়তা দেয়া হয় নিজ দেশ বেলারুশে ফেরার পথে মস্কোর ট্রানজিটে তাকে হেনস্তা করা হবেনা। জেল হতে মুক্তি দিয়ে থাই পুলিশ ভাসুকেভিচকে তুলে দেয় মস্কো-গামী বিমানে। মস্কো বিমানবন্দরে অবতরণের সাথে সাথে ঝাঁপিয়ে পরে রুশ ইমিগ্রেশন পুলিশ। চ্যাংদোলা করে তুলে নেয় মিনস্কগামী আনাস্তাসিয়া ভাসুকেভিচকে।
ওলেগ ভ্লাদিমিরভিচ দেরিপাস্কা! রুশ শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী। শিল্প-গ্রুপ বেসিক এলেমেন্ট এবং দেশটার অন্যতম বৃহৎ দাতব্য প্রতিষ্ঠান 'বলনোয়ে দেলো'র প্রতিষ্ঠাতা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামার আমলে রুশ অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উপর যে অবরোধ আরোপ করা হয় তার অন্যতম শিকার ছিলেন এই ওলেগ দেরিপাস্কা। ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী চেয়ারম্যান পল মেনাফোর্টের এককালীন বস ও বন্ধু একই দেরিপাস্কা। ক্ষমতা হাতে পাওয়ার সাথে সাথে ট্রাম্প প্রশাসন রুশদের উপর হতে অবরোধ তুলে নেয়ার তৎপরতা শুরু করে এবং শেষ পর্যন্ত দেরিপাস্কার এল্যুমুনিয়াম ব্যবসায় আটকে যাওয়া মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ফিরিয়ে দেয় ডোনাল্ড ট্রাম্প এন্ড গং। সন্দেহ করা হয় দেরিপাস্কা ও প্রিখদকোর সাথে একই ইয়টে ঐ সময় ট্রাম্পের দুজন সহযোগীও ছিল, যাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল হিলারি ক্লিনটনের ইমেইল হ্যাক করে তা মার্কিনীদের সামনে প্রকাশপূর্বক ফায়দা নেয়া। রাজনৈতিক ক্ষমতার মসৃণ পথে হেটে ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনো প্রেসিডেন্ট, পুতিন এখনো রুশ দেশের আজীবন প্রেসিডেন্ট, দেরিপাস্কা এখনো হয়ত ঘুরে বেড়ান বন্দর হতে বন্দরের। মাঝখানে সত্য প্রকাশের বলি হয়ে আটকে গেছেন বেলারুশ সুন্দরী আনাস্তাসিয়া ভাসুকেভিচ!