জেফ্রি এপস্টেইন। আমেরিকান ধনকুবের, বিজনেসম্যান। নিউ ইয়র্কের অভিজাত পাড়ায় বিশাল ম্যানশন। ক্যরাবিয়ান সাগরের উত্তাল তরঙ্গের মাঝে ব্যক্তিগত দ্বীপ। নিজস্ব বিমান। এক কথায় মার্কিন সমাজে নিজকে ধনী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে যা কিছু প্রয়োজন সবই ছিল এই বিলিয়নিয়ারের ভাণ্ডারে। নিউ ইয়র্ক জেলের নির্জন সেলে নিজকে ঝুলানোর আগে তার আসল পরিচয় ছিল একজন পেডাফেলিয়া ও সেক্স ট্রাফিকার হিসাবে। এ কাজে তার সেবায় নিয়োজিত ছিল বিশ্বব্যাপী ওয়েল অর্গেনাইজড ক্রাইম সিন্ডিকেট। যার নেতৃত্বে ছিল তারই স্ত্রী/গার্লফ্রেন্ড। সিন্ডিকেটের সদস্যদের মূল কাজ ছিল নিউ ইয়র্ক, লন্ডন, প্যারিস সহ পৃথিবীর বিভিন্ন শহরে টহল দেয়া। এবং ১৩ হতে ১৬ বছর বয়সের মেয়েদের পিছু নেয়া। হাজার রকমের প্রলোভন এবং সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখিয়ে তাদের টেনে আনতো এপস্টেইনের প্রাসাদে। অনেকটা সাপ খেলার মত তাদের নিয়ে খেলতো এপস্টেইন। শুরু ম্যাসাজ দিয়ে। ধীরে ধীরে তা রূপ নিতো বিকৃত যৌনাচারে। স্বাদে গন্ধে পুরানো হয়ে যাওয়া মেয়েদের জন্য খুল দিত নতুন রাস্তা। ১৪ হতে ১৬ বছরের অন্য কাউকে সাপ্লাই দিতে পারলে তার জন্যে অপেক্ষা করতো ভাগ্য গড়ার নতুন হাতছানি। এভাবেই এপস্টেইন গড়ে তুলেছিলেন বিশাল এক যৌন সাম্রাজ্য। প্রতিদিন তিন হতে চারজন অপ্রাপ্ত বয়স্কা মেয়ে ছিল তার জন্যে বাধ্যতামূলক।
সময় গড়ানোর সাথে এই সাম্রাজ্যে যোগ দেন নামী দামী আরও অনেকে। যার অন্যতম ছিলেন ব্রিটেনের প্রিন্স এন্ড্ররু। এসব আসরে আরও দেখা যেত প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। তালিকায় আরও ছিলেন প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী ইয়াহুদ বারাক, অভিনেতা আলেক বল্ডউইন সহ নামী দামী আরও অনেকে। এপস্টেইন নিজে ভোগ করার পর শিকার করা নাবালক মেয়েদের পাঠিয়ে দিতেন ইয়ার বন্ধুদের শয়নকক্ষে। প্যারিসের জনৈক স্বনামধন্য ফ্যাশন ডিজাইনার একাই এক হাজারের উপর নাবালক মডেল সাপ্লাই দিয়েছেন এপস্টেইনের দরবারে। এভাবেই বছরের পর বছর ধরে চালিয়ে যাচ্ছিলেন বিকৃত যৌনাচার। অনেক ভিক্টিম আদালতের আশ্রয় নিলেও হাই-লেভেল কানেকশনের কারণে মুক্ত বিহঙ্গের মত ঘুরে বেড়িয়েছেন পৃথিবীর একপ্রান্ত হতে অন্য প্রান্ত। একবার ১৩ মাসের জেল হলেও আদালত তাকে সপ্তাহের ছয় দিন বাইরে এসে অফিস করার সুযোগ দিয়েছিল।
পৃথিবীর বিভিন্ন আদালত হতে বেরিয়ে আসতে পারলেও শেষপর্যন্ত ধরা দিতে হয় নিউ ইয়র্কের আদালতে। হুড়মুড় করে ভেঙ্গে পরে এপস্টেইন সাম্রাজ্য। শত শত মেয়ে সামনে এসে বর্ণনা দেয় তাদের ভেতরের কাহিনী। গোটা বিশ্ব স্তব্ধ হয়ে হজম করে একজন বিলিয়নিওরের এই কালো অধ্যায়। এপস্টেইন বুঝতে পারে তার পৃথিবীর কলঙ্কময় সমাপ্তি নিকটে। তখনই বেছে নেয় আত্মহত্যার পথ। যদিও অনেকের মতে তাকে হত্যা করা হয়েছে। বিল ক্লিনটন, ডোনাল্ড ট্রাম্প, প্রিন্স এন্ড্রুদের মত রাগব বোয়ালদের বাঁচানোর লক্ষ্যে।
মরোনত্তর বিচার চালিয়ে যাওয়ার সিদ্বান্ত নিয়েছে আদালত। আরও অনেক কাহিনী, অনেক না বলা কথা সামনে আসার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।