অবাক করার মত শহর এই জেরুজালেম। তিন ধর্মের পবিত্র শহর ইসরায়েলিদের নিয়ন্ত্রনে থাকলেও সূখে নেই কেউ। মানুষের চেহারার দিকে তাকালে তাই মনে হয়। অসূখী ভাবটা বেশী চোখে পরে ইহুদি কোয়ার্টারের দিকে গেলে।
দুপুরের খাবার খেতে মনস্থির করলাম ঐ এলাকায়। আমার হোটেলটার নীচেই বিশাল একটা শপিং মল। ওখানেই দুপুরের খাবারটা সেরে নেওয়ার সিদ্বান্ত নিলাম।
মলে মানুষ গিজ গিজ করছে। অথচ খুব একটা হৈ চৈ নেই। সবাই কেমন চুপচাপ।
চারদিক ভাল করে দেখে নিয়ে একটা ফার্ষ্ট ফুডের দোকানে ঢুকে পরলাম।
টেবিলে বসে আছি। অর্ডার নিতে কেউ দৌড়ে এলনা। বেশকিছুটা সময় অপেক্ষার পর একজন এসে হাতে একটা মেনু ধরিয়ে দ্রুত মিশে গেল মানুষের ভিড়ে। একবারেরি বাক্যহীন।
২০ মিনিট অপেক্ষার পর তরুন গোছের একজন এসে খুব নিরস গলায় জানতে চাইলো আমার পছন্দ। আমিও একই চেহারায় উত্তর দিলাম তার প্রশ্নের।
খাবার এলো আরও ১৫ মিনিট পর। অনেকটা আছাড় মেরে প্লেট ও সাথে একটা বাস্কেট রেখে গেল টেবিলের উপর। আমারও মুখ তব্দা খেয়ে রইল। ধন্যবাদ দেয়া দূরে থাক, মুখ হতে কোন শব্দই বের হলনা।
অনেকটা সময় নিয়ে চারদিকে ভাল করে তাকালাম। কোথাও যাওয়ার কোন তাড়া ছিলনা। সিরিয়ান সীমান্ত গোলান হাইটসের দিকে যাওয়ার প্লানটা মাঠে মারা যাওয়ায় হোটেলেই থেকে যাওয়ার সিদ্বান্ত নিয়েছিলাম। খাওয়া শেষকরে ৫ সেকেল (ইস্রায়েলি মুদ্রা) টেবিলের উপর রেখে বেরিয়ে পরলাম মল হতে।
রাতের খাবারের জন্যে ফিরে গেলাম পূর্ব জেরুজালেমের মুসলিম কোয়ার্টারে। ওখানের চেহারা সম্পূর্ণ ভিন্ন।
মানুষ আর মানুষ। বসায় জায়গা নেই কোথাও। কারও মুখ বন্ধ নেই। সবাই একসাথে কথা বলছে। চারদিকে বিরামহীন হৈ চৈ।
একজন এসে পথ দেখিয়ে একটা টেবিলের দিকে নিয়ে গেল। দ্বিতীয়জন মেনু হাতে এগিয়ে এলো। লম্বা একটা সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করলো এখানটায় নতুন কিনা।
আল আকসা মসজিদটা পাশেই। ওখানে যাওয়ার সহজ রাস্তাটার কথা জিজ্ঞেস করতে ওয়েটার খুশিতে লাফিয়ে উঠলো।
দরকারের চাইতে আরও অনেক তথ্য দিয়ে স্বাগত জানালো জেরুজালেমে।
দুই প্রান্তের দুই খাবারের স্বাদও ছিল ভিন্ন। পূর্ব জেরুজালেমের কোলাহল্পূর্ণ রেষ্টুরেন্টটায় প্রাণ ছিল। ছিল অবিশ্বাস্য আন্তরিকতা। একই শহরে অপর প্রান্তেও জীবন ছিল। কিন্তু তা ছিলে নিস্তেজ, নীরস। প্রথম ছবিটা জেরুজালেমের ইহুদি অধ্যুষিত এলাকার ফার্ষ্ট ফুডের দোকানে। দ্বিতীয়টা পূর্ব জেরুজালেমের মুসলিম এলাকার এক হোটেলে।