সমসাময়িক মার্কিন রাজনীতির উপর যাদের সম্যক জ্ঞান আছে তাদের কাছে রুডলফ জুলিয়ানী কোন অপরিচিত নাম নয়। ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কস্থ টুইন টাওয়ারে হামলার সময় তিনি ছিলেন ঐ মেগা সিটির মেয়র। ৯/১১ উত্তর নিজের কর্ম তৎপরতা দিয়ে নিজকে আমেরিকার মেয়র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ২০ বছর পর রুডি জুলিয়ানী আবাও খবরের শিরোনাম হয়েছেন। তবে এ যাত্রায় ভুল কারণে।
এক সময়ের আমেরিকান মেয়র এখন মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই'এর নজরদারীতে আছেন বিদেশী এজেন্ট হিসাবে। দুদিন আগে রুডি জুলিয়ানীর অফিস ও বাসভবন রেইড করেছে এফবিআই। দখলে নিয়েছে তার কম্পিউটার। গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্টেরা খুঁজছে রাশিয়া ও ইউক্রেইনের সাথে রুডির যোগাযোগের বিভিন্ন রেকর্ড।
প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রাইভেট উকিল হয়ে রুডি এই দুই দেশে একাধিকবার ভ্রমণ করেছিলেন। মূল উদ্দেশ্য ২০২০ সালের প্রেসিডেন্টসিয়াল নির্বাচনে ডেমোক্রেট দলীয় প্রার্থী জোসেফ বাইডেনের ছেলে হান্টার বাইডেনের সাথে ইউক্রেইন সরকারের সম্পর্ক উৎঘাটন করা। পূর্ব ইউরোপের এই দেশটার একটা কোম্পানীর বোর্ড অব ডাইরেক্টরস্'এর সদস্য ছিলেন হান্টার বাইডেন। অভিযোগ উঠেছিল ওবামা-বাইডেন প্রশাসনের সুবিধা নিতে ইউক্রেইন সরকার ইচ্ছে করে হান্টার বাইডেনকে নিয়োগ দিয়েছিল। একাধিক নিরেপক্ষ কমিশন তদন্ত পূর্বক নির্দোষ ঘোষণা করেছিল হান্টার বাইডেনের ভূমিকা। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প চাইছিলেন যেকোন ভাবেই হোক ইউক্রেইনে হান্টার বাইডেনের ভূমিকাকে বিতর্কিত করে নির্বাচনী ফায়দা লুটতে।
কাজটা করার দায়িত্ব দেন রুডি জুলিয়ানীকে। রুডি একাধিকবার ইউক্রেইন সফর করেন। দেশটার মাফিয়াচক্রের অনেকের সাথে দেখাকরে কাল্পনিক কিছু কাহিনী সামনে আনেন। এসব কাহিনী ইউক্রেইন সরকারের কোন সমর্থন পায়নি। সরকারী স্বীকৃতি আদায়ে ব্যর্থতার কারণ হিসাবে রুডি কিয়েভে তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মারিয়া ইভানভিচকে দায়ী করে বস ট্রাম্পের কাছে অভিযোগ করেন। ট্রাম্প পত্রপাঠ মারিয়া ইভানভিচকে বরখাস্ত করেন।
এখন অভিযোগ উঠছে, মারিয়া ইভানভিচকে বিদায়ের পিছনে রুশ গোয়েন্দা সংস্থার হাত ছিল। এবং এ কাজে তাদের হয়ে কাজ করেছিলেন এককালের আমেরিকার মেয়র রুডি জুলিয়ানী। অভিযোগ প্রমানিত হলে রুডির জন্যে অপেক্ষা করছে নূন্যতম ৫ বছরের জেলটার্ম।
মার্কিন বিচার ব্যবস্থায় বিচার বিচার খেলাটা শুরু হয় এভাবেই। রুডি যেদিন বুঝতে পারবে তার সামনে জেলের তালা ঝুলছে, তখন বাঁচার জন্যে গোয়েন্দাদের কাছে খুলে বলবে ইউক্রেইন মিশনের গোপন তথ্য। সেখানে অটোমেটিক চলে আসবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাম। এ অনেকটা ছোট মাছ বড়শিতে গেঁথে বড় মাছ শিকার করার মত। নিজের দোষ স্বীকার করে রুডি ভেতরের খবর প্রকাশ করলে তার জেলটার্ম হয় মাফ অথবা মিনিমাম পর্যায়ে নিয়ে আসা হবে। নিজে বেঁচে গেলেও তাতে ফেঁসে যাবেন বড় এক মাছ। এবং সে বড় মাছ নিজেও জানে এখানে কি হতে যাচ্ছে। উল্লেখ্য, রুডি জুলিয়ানীর কর্মকান্ডের তদন্ত শুরু হয়েছিল ট্রাম্পের আমলে। যা কেবল আমেরিকার বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতার কথাই প্রমান করে।