মাঝে মধ্যে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজকে চেনার চেষ্টা করি। নিজকে প্রশ্ন করি, আয়নায় যাকে দেখছি সত্যি এটা কি আমি? আমাকে আমার চেয়ে ভাল করে চেনার দ্বিতীয় কেউ নেই। তাই আয়নার আমি ও আমার সাথে কথোপকথন হয় খুব খোলামেলা। আমার ভেতরও একটা পশু বাস করে। আমি বিশ্বাস করি প্রতিটা পুরুষের ভেতরই শক্ত সামর্থ্য একটা পশু সহবস্থান করছে। একজন মানুষ কতটা সভ্য তা নির্ভর করে ভেতরের পশুটাকে আমরা কতটা বশে এনে সমাজে চলাফেরা করতে পারি। বশ করার চেষ্টা আমিও করি। তবে সবসময় সে চেষ্টা জগত সংসারের তাবৎ নিয়ম কানুন মেনে চলার চেষ্টার ভেতর হয় তা সত্যি নয়।
আর দশটা পুরুষের মত আমিও কামুক। চোখ খুলে কাউকে দেখলে তাকে শয়নে স্বপনে কামনা করি। অনেক সময় এ কামনা প্রকাশও করে ফেলি। আমি যখন বুঝতে পারি আমার ভেতরের পশুটা আমার উপর চেপে বসে আমাকে নিয়ন্ত্রণ করছে, আমি পিছিয়ে আসি। কারণ ভেতরের পশুর সাথে লড়াই করার মত শক্তি আমার আছে।বসুন্ধরার এমডি আনভীর আমার মতই একজন। সেও পশু শক্তিতে শক্তিমান একজন পুরুষ।
মোসারাত জাহান মুনিয়া বাংলাদেশের কনটেক্সটে কেন, পৃথিবীর যে কোন কনটেক্টসে একজন সুদর্শনা কিশোরী। ভার্চুয়াল দুনিয়ায় মুনিয়ার অনেক ছবি ভেসে বেড়াচ্ছে। তার একটা খুঁটিয়ে দেখার সময় সামনে উপস্থিত হন আমার গৃহিনী। গভীর আক্ষেপ ও হতাশার সাথে জানতে চান এমন একটা সুন্দরী কিশোরের দিকে গভীরভাবে তাকিয়ে কি খুঁজছি। তখনই আমি ধরে নিয়েছি মুনিয়ার সুন্দরী আখ্যাটা আমার ভুল হয়নি।
আমাদের ভেতরের পশুকে বাগে আনতে ব্যক্তি আমরা যখন অক্ষম হয়ে পরি দায়িত্বটা চলে যায় রাষ্ট্রের উপর। একটা রাষ্ট্রে কতটা সুশাসন বিরাজ করে তার মাপকাঠি নির্ধারিত হয় প্রত্যেক নাগরিকের ভেতর লুকিয়ে থাকা পশু যখন প্রকাশ্যে চলে আসে তার কতটা বিহিত করতে পারে। আনভীর প্রচুর সম্পদের মালিক। এ সম্পদই তার চালিকা শক্তি। এ শক্তি রাষ্ট্রের শক্তির চাইতেও শক্তিধর। তাই রাষ্ট্র বশ মানতে বাধ্য হয় আনভীরের পশুত্বের কাছে। পার্থক্যটা এখানেই।
আনভীর দানব হয়ে জন্মায়নি। আমার আপনার মত দুই হাত, দুই পা ও একটা মাথা নিয়েই পৃথিবীতে এসেছিল। কিন্তু বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্র তাকে দানব বানাতে নিবিড় সহযোগিতা করেছে। তার প্রমাণ সরকার, মিডিয়া ও দেশটার আইন ও বিচার ব্যবস্থা। অর্থ থাকলে যেখানে সব সম্ভব সেখানে এমন কিছু ঘটনা ঘটবেই।
মুনিয়া আত্মহত্যাটা যদি অপরাধের কাঠামোতে ফেলে আনভীরকে অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যায়, প্রশ্ন উঠবে, আনভীরের অপরাধটা কোথায়? আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেয়া বলতে আসলেই কি কিছু আছে? মুনিয়া নামের মেয়েটি নাবালিকা ছিলনা। সে বুঝে শুনেই পা বাড়িয়েছিল। ওভার-নাইট ধনী আর সুখ সম্পদের মালিক হওয়ার যে প্রতিযোগিতা তাতে হিসাব কষেই শামিল হয়েছিল আমাদের মুনিয়া। আত্মহত্যার আগে যে ফোনালাপ বাজারে এসেছে তাতে বুঝা গিয়েছিল বড় অংকের টাকা নিয়ে ফ্যাসাদে পরেছিল সে। পাওনাদারের চাপ সইতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিল এমন একটা উপসংহারে আসলে খুব কি ভুল হবে?
দুজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ বুঝেশুনে একসাথে বাস করায় আমি কোন অপরাধ দেখিনা। হতে পারে এসব লম্বা সময় পশ্চিমা দুনিয়ায় বাস করার সুফল অথবা কুফল। আনভীরের অর্থ আছে, সে অর্থের কাছে ধরা দিয়েছিল মুনিয়া। এবং তা হিসাব কষেই। এখানে মুনিয়া নামের তরুণীকে ধোয়া তুলশী পাতা বানানোর কোন অবকাশ দেখিনা। আমার বিচারে মূল আসামী এখানে রাষ্ট্র। রাষ্ট্রই জন্ম দিয়েছে আনভীর নামের একজন জেফরি এপষ্টেইনকে। বিচারের কাঠগড়ায় কাউকে দাঁড় করাতে চাইলে দাঁড় করাতে হবে রাষ্ট্র ও তার চালিকা শক্তি সরকারকে। রাষ্ট্র তথা সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে আমার ভেতরের পশুকে ভেতরে রাখার নিশ্চয়তা দেয়া। আনভীরের পশুকে প্রতিরোধ করা দূরে থাক, তাকে লালন পালন করে ক্ষুধার্ত হায়েনা হতে সাহায্য করেছে বাংলাদেশ নামের একটা রাষ্ট্র। যার কারণেই মুনিয়ার পশুত্ব পরাজিত হয়েছে আনভীরের পশুত্বের কাছে। দুই পশুর লড়াই ছিল অসম। একজনের ছিল অর্থ, মিডিয়া আর সরকার। আর অন্যজনের ছিল বিধ্বংসী রূপ।