সাকিব আল হাসান প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়কে আউট না দেয়ায় আম্পায়ারের দিকে তেড়ে এলেন..ষ্ট্যাম্প উপড়ে ফেলে আছার মারলেন।
মাঠে এলেন গতি দানব। তেনার সাথেও ঝামেলা পাকালেন।
ব্যাস, বিপ্লবের শুরু নাকি এখানেই!
দেশীয় ক্রিকেটে নাকি অনেক সমস্যা। আম্পায়াররাও নাকি বিশেষ দলকে চ্যাম্পিয়ন বানানোর নেটওয়ার্কের সক্রিয় সদস্য। তাই সাকিবের লাথি নাকি ষ্ট্যাম্পে না, বরং তা ছিল বাংলাদেশের আভ্যন্তরীন ক্রিকেটকে লাথি মারার শামিল। প্রতিবাদ প্রতিরোধের বিপ্লবী আগুন!
আম্পায়ার পরিষ্কার একটা আউটকে এড়িয়ে গেছেন। তার উপর বৃষ্টির কারণ দেখিয়ে ওভারের এক বল বাকি থাকতে খেলা বন্ধ করতে বাধ্য করেছেন। হিসাব হচ্ছে, বাকি বলটা খেলে ওভার পূর্ণ করলে ডাকওয়ার্থ-লুইস হিসাবের আওতায় এসে যেতো ম্যাচের ভাগ্য। ফলাফল, আবাহনীর পরাজয়। উপসংহার, আবাহনী ক্লাবকে জেতানোর মিশনে রেফারীও জড়িত।
বাংলাদেশের কনটেক্সটে এ ধরনে অভিযোগ অস্বাভাবিক কিছু নয়। এসব আগেও হয়েছে, এখনো হচ্ছে এবং সামনেও হবে।
আবাহনী ক্লাব ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এর জন্ম শেখ পরিবারের অন্যতম কর্ণধার, বর্তমান সরকার প্রধানের ভ্রাতা প্রায়তঃ শেখ কামালের হাত ধরে।
সমাজের সবকিছুতে ক্ষমতাসীনদের রাজত্ব চাপিয়ে দেয়ার অংশ হিসাবে এই ক্লাবকে চ্যাম্পিয়ন বানানোটাও নির্বাচন হরণের মত একটা অংশ। এ কাজ অতীতেও হয়েছে। হয়েছে ফুটবল, হকি সহ সবকটা স্পোর্টিং এভিনিউর সবকটা ভেন্যুতে।
সাকিব কি কোনদিন এমন ক্লাবের অংশ ছিলেন না যে ক্লাব ষড়যন্ত্রের নীল নক্সায় চ্যাম্পিয়নের ট্রফি গলায় ঝুলিয়েছিল?
এ ব্যপারে তিনি কি কোনদিন প্রতিবাদ করেছিলেন?
পাঠকরা আমাকে ক্ষমা করবেন এখানে রাজনীতি টেনে আনছি বলে।
বাস্তবতা হচ্ছে, সাকিব আল হাসান খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ারের ভরা যৌবনে মধ্যরাতের ভোট ডাকাতির সাংসদ হতে চেয়েছিলেন। উপর হতে খোদ ঈশ্বরের মানা থাকায় নাম লেখাতে পারেননি ডাকাতির তালিকায়।
সেদিনের সে ভোট ডাকাতির ধারাবাহিকতাই হচ্ছে আজকে খেলার মাঠের জোচ্চুরি। সবকিছু এক সুতায় গাঁথা।
বাস্তবতা হচ্ছে, বিশ্বসেরা তকমা-ধারী এই খেলোয়াড়ের মাঠের সময়টা ইদানিং ভাল যাচ্ছিলোনা। এক বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে মাঠে ফিরে নিজ নামের প্রতি সুবিচার করতে পারছিলেন না। ভারতের প্রফেশনাল লীগে খেলতে গিয়ে শেষপর্যন্ত ডাগ-আউটে বসে থেকে পানির বালতি টানতে বাধ্য হয়েছিলেন। দেশে ফিরে শ্রীলংকা মিশনেও ব্যর্থ। ব্যাট দ্যুতি ছড়ায়নি। বলে ছিলনা পুরানো ধার।
স্থানীয় লীগের পারফরমেন্সে ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ণ করে নিজের খারাপ সময়টাকেই সামনে আনেন। এখানেই ছিল সাকিবের ক্ষোভ। এই ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন মাঠে। রেফারীর দিকে তেড়ে যাওয়া, ষ্ট্যাম্প উপড়ে ফেলে আছাড় মারার ভেতর যারা বাংলাদেশ ক্রিকেটের কালো দিকটার বিরুদ্ধে একজন খেলোয়াড়ের প্রতিবাদ হিসাবে দেখছেন তার হয় ডিলিওশ্যোনাল, অথবা এই খেলোয়াড়ের অন্ধ মুরিদ।
আর দশটা প্রতিষ্ঠানের মত বাংলাদেশের ক্রিকেটও করাপ্ট। এখানেও ক্ষমতার রাজনীতি। এখানেও হয় পেশী শক্তির উলঙ্গ প্রদর্শনী। এবং তা যেমন হয় চার দেয়ালের সীমাবদ্ধতায়, তেমনি হয় খেলার মাঠে।
কোন খেলোয়াড়ই সিক্স মিলিয়ন ডলায় ম্যান নয়। ভাল সময়ের পাশাপাশি খারাপ সময়ও আসতে বাধ্য। ভাল সময়ে আপনি ২০০ কোটি টাকা ব্যাংকে ভরবেন, আর খারাপ সময়ে মাঠে ক্ষোভ ঝাড়বেন, আর যাই হোক তা ভদ্র খেলোয়াড়ের লক্ষণ হতে পারেনা।