নেভার এগেইন!
১৯৭৩ হতে ১৯৮৫।...১২ বছর। দক্ষিণ আমেরিকার দেশ উরুগুয়েতে এই দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় ছিল স্বৈরশাসকের দল।
সামরিক অভ্যুত্থান দিয়ে শুরু। শুরুতে ক্ষমতায় ছিলেন খোয়ান মারিয়া বোর্ডাবেরি। তার পদাংক অনুসরন করে একে একে রাজত্ব করে গেছেন জেমি মরটানের ও হেক্টর ভিয়ানা মারটেরল।
এই ১২ বছর স্বৈরশাসকের দল দেশটার জনগনের উপর চালিয়ে গেছে নীপিড়নের বিরামহীন ষ্টিমরোলার। হাজার হাজার মানুষ শিকার হয়েছিল গুম, খুন আর বিনা বিচারে বছরের পর বছর জেল খাটার।
যে কোন অবৈধ শাসকের পতনের মত উরুগুয়েতেও পরাজিত হয়েছিল গুম ও খুনের হোতারা। অবসান হয়েছিল স্বৈরশাসনের।
পতনের প্রথম প্রহরে দেশটার নাগরিকরা শপথ নিয়েছিল, নেভার এগেইন! অর্থাৎ আর কোনদিন তাদের সুযোগ দেয়া হবেনা। শপথকে চীরস্থায়ী করার লক্ষ্যে রাস্ট্রীয় সিদ্ধান্তে গৃহিত হয় 'নেভার এগেইন' ডে পালনের। ১৯শে জুনই সেই দিন এবং দিনটা দেশটায় সরকারী ছুটির দিন।
ক্ষমতার অপব্যবহার না করার ধারাবিকতায় উরুগুয়েতে ২০১০ হতে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন বিশ্বের দরিদ্রতম প্রেসিডেন্ট হোসে আলবার্তো পেপে মুজিকা। ক্ষমতায় আসার আগে তিনি ছিলেন সাধারণ চাষী এবং ক্ষমতায় বসেও যাপন করে গেছেন চাষীর জীবন। স্বৈরশাসকের দল তাকেও বিনা বিচারে জেলে আটকে রেখে মুখ বন্ধ করতে চেয়েছিল।
ইদানিংকালে বাংলাদেশের মত আরও অনেক দেশ স্বৈরশাসনের যাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছে। এক ব্যক্তির কঠোর শাসনে দেশ হতে নির্বাসিত হয়েছে গণতন্ত্র। কেড়ে নেয়া হয়েছে মানুষের ভোটের অধিকার। মিডিয়া সহ সমাজের সর্বস্তরে নিশ্চিত করা হয়েছে কঠোর নিয়ন্ত্রন। মানুষ গুম হয়ে যাচ্ছে। বিনা বিচারে জেল খাটছে। অন্যদিকে ক্ষমতার ছত্রছায়ায় লুটে নেয়া হচ্ছে রাস্ট্রীয় সম্পদ।
উরুগুয়ের মত বাকি দেশগুলোতেও একদিন পতন হবে এসব স্বৈরশাসকদের। তারাও নিক্ষিপ্ত হবে ইতিহাসের আস্তাকুড়ে। সেদিন কি ওসব দেশের নাগরিক তথা রাজনীতিবিদগন পারবেন শপথ নিতে, 'নেভার এগেইন' ?
উরুগুয়ে পারলে বাকি সবাইকেও পারতে হবে। কেবল তখনই ধরণী হতে বিদায় নেবে ক্ষমতালিপ্সু লুটেরার দল!