দারুণ কিছু সময় পার করছি, যার বিস্তারিত চাইলেও এখানে প্রকাশ করতে পারছিনা। আদালতের কড়া নির্দেশ ট্রায়াল শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেইসের "ক"ও প্রকাশ করা যাবেনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
সকালে সেজে-গুজে কোর্টে গেলাম জুরি প্যানেলের রেন্ডম সিলেক্টেড সদস্য হিসাবে। ওখানে গিয়ে চক্ষু চড়কগাছ! আমার মত রেন্ডম সিলেক্টেডের সংখ্যা কম করে হলেও ৮০ জন।
ওদের কেউ প্রাক্তন পুলিশ অফিসার, কেউ একটিভ ল-ইয়ার, কেউ সান্দিয়া ল্যাবের বৈজ্ঞানিক (এই ল্যাবেই পারমানবিক বোমা আবিষ্কৃত হয়েছিল), কেউবা আবার স্ট্রীট ফুড ভেন্ডার।
সিলেকশন প্রসেস শুরু হওয়ার প্রথম ৫ মিনিটে ১০জনকে বিদায় দেয়া হয়। কারণ বাকিদের জানানো হয়নি।
বাকি ৭০ জনকে কোর্ট রুমে নিয়ে বাদী বিবাদী দুই পক্ষের আইনজীবীদের হাতে তুলে দেয়া হলো। কারণ দুই পক্ষের যৌথ সম্মতিতেই পৌছতে হয় ফাইনাল সিলেকশনে।
দুই পক্ষই গাগু গাগু সব প্রশ্ন করে পরীক্ষা শুরু করল সম্ভাব্য জুড়িদের। কোর্টে উপস্থিত অনেকে নিজেদের স্মার্টনেস দেখাতে ব্যস্ত হয়ে পরল।
আর আমি মুখে তালা দিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকলাম কখন শেষ হবে এ 'শাস্তি'।
লম্বা সময় ধরে চলল সিলেকশন প্রসেস। ধৈর্যের শেষ সীমায় গিয়ে বিচারক সমাপ্তি টানলেন শেষ পর্যন্ত। ততক্ষণে সবাই ক্লান্ত, শ্রান্ত, উদভ্রান্ত।
কোর্টের বাইরে আমাদের অপেক্ষা করতে বলা হলো।
আমি প্রায় শতকরা ৯৯ ভাগ নিশ্চিত ছিলাম এ যাত্রায় আমি সিলেক্টেড হতে যাচ্ছি না।
প্রায় আধাঘণ্টা পর হাতে একটা তালিকা নিয়ে বেরিয়ে এলো কোর্ট ক্লার্ক। শুরু হল অপেক্ষা ও উৎকণ্ঠার সমাপ্তির পালা।
মার্কিন বিচার ব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অংশ এই জুরি প্যানেল। প্যানেলের কাজ হচ্ছে আসামী দোষী অথবা নির্দোষী তার রায় দেয়া। এই রায়ের উপর ভিত্তি করে বিচারক শাস্তি অথবা মুক্তি দেন আসামীকে।
মোট ১৪ জনের প্যানেলের ৭ং জুরি হিসাবে আমার নাম যখন ডাকা হলো বেশ অবাক। স্বপ্নেও ভাবিনি আমাকে ডাকতে পারে।
সিলেকশন প্রসেস শেষ হতে ভাবলাম হয়ত আজকের মত আমাদের ছেড়ে দেয়া হবে। নিশ্চয় আগামীকাল সকাল হতে শুরু হবে আসল ট্রায়াল।
তেমন কিছুই ঘটল না। ২০ মিনিটের ভেতর শুরু হল বিচার। আমি জুরিদের জন্য নির্ধারিত আসনের একদম সামনের সাড়িতে। সরকার ও আসামী পক্ষ পাশাপাশি বসা, দুপক্ষের মুখোমুখি আমরা।
শুরু হলো শুনানি।
এতদিন মুভি অথবা টিভি সিরিজে যা দেখে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যায় করেছি আজ তা বাস্তব জীবনে দেখছি এবং সাক্ষী হচ্ছি। এ এক বিরল অভিজ্ঞতা যা এ দেশে জন্ম নিয়েও অনেকে অর্জন করতে পারেনা।
কোর্টে মোবাইল ফোন এলাউড না, তাই ছবি নেয়া সম্ভব হচ্ছেনা। কেইসের কনটেন্ট নিয়ে এখানে কিছু লিখলে আসামী পক্ষ মিস-ট্রায়াল দাবি করার অধিকার রাখে, তাই মোষ্ট ইন্টারেস্টিং অংশ নিয়ে এখানে টু শব্দটি করছিনা। বিচার পর্ব শেষ হলে এ অভিজ্ঞতা শেয়ার করার আশা রাখি।
আগামীকাল সকাল ৯টায় আবারও শুরু হবে কোর্ট ট্রায়াল।