আমার নিউজ ফিডে ঘুরে ফিরে কেবল বাংলাদেশের ক্রিকেট ফিরে আসছে। বাংলাদেশের বললে হয়ত কিছুটা ভুল বলা হবে; বরং সাকিব আল হাসানের ক্রিকেট। বুঝাই যাচ্ছে এই ক্রিকেটার শেখ হাসিনার মত কেবল মাঠের সৈনিকই পয়দা করেন নি, অনলাইন এক্টিভিষ্টও তৈয়ার করেছেন এক ঝাঁক। হয়ত এ কাজে মালপানিও বিনিয়োগ করেছেন যথেষ্ট। বাংলাদেশ ক্রিকেট মানে সাকিব আল হাসান, সাকিব আল হাসান মানে বাংলাদেশ ক্রিকেট, ক্ষণজন্মা এই ক্রিকেটারের জন্ম না হলে বাংলাদেশের ক্রিকেট অসম্পূর্ণ থেকে যেতো...ব্লা ব্লা ব্লা... আবাল আদোচার দল এসব বস্তা পচা বুলি আওরাতে আওরাতে নিউজ ফিড পচিয়ে ফেলেছে প্রায়।
চলুন গেল শতাব্দীর ৭০-৮০'র দশকে ফিরে যাই। ফিরে যাই আবাহনী, মোহামেডান তথা ঢাকার ফুটবল লীগ নিয়ে উন্মাদনার দিনগুলোতে। এ উন্মাদনা কেবল স্টেডিয়ামেই সীমাবদ্ধ ছিলনা, বরং ছড়িয়ে পরেছিল ছিল ঘরে ঘরে। স্ত্রী তার স্বামীকে তালাক দিয়েছে তার পছন্দের দলকে সমর্থন না করার কারণে, এমন কথাও শোনা যেত। ততটা না হলেও আমিও ছিলাম এ কাতারে। পছন্দের একটা দল ছিল। স্টেডিয়ামের কাছাকাছি বাসা হওয়ার কারণে ঐ দলের কোন খেলাই মিস করতাম না।
তারপর শুরু হল মিডিয়া যুগের ফুটবল। লাইভ প্রচার শুরু হল বিশ্বকাপ সহ ইউরোপিয়ান কাপের অনেক খেলা। ওসব খেলা টেলিভিশনের পর্দায় কেবল দেখা নয় যেন গিলতে শুরু করলাম। ধীরে ধীরে পরিষ্কার হতে শুরু হল দেশি ফুটবল নিয়ে উন্মাদনার কুয়াশা। মাথার উপর বিরামহীন বৃষ্টি, মাঠে দুই দলের ২২ জন খেলোয়াড় আর গ্যালারিতে আমি। খেলা হচ্ছে দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাব ও নিজ পছন্দের দলের মাঝে। বাসায় ফিরে রাতে টেলিভিশনের পর্দায় দেখলাম জার্মান ফুটবল লীগের খেলা। এবং এখানেই শুরু দেশি ফুটবলের শেষ (beginning of the end)।
সাকিব না তামিম, তামিম না মাহমুদুল্লাহ, অমুক খেলোয়াড় ৩ নাম্বারে না খেলে কেন ৪নং খেলছে...লিটন দাস কেন দলে...ইত্যাদি ইত্যাদি!
একসময় একই তর্ক বাংলাদেশের ফুটবল নিয়েও চলতো। হাট-মাঠ-ঘাট, চায়ের দোকান, হোটেল রেস্তোরা গরম থাকতো তর্ক বিতর্কে। সময়ের পরিক্রমায় আমার মত অনেকেই বুঝে যায় বাংলাদেশে যে ফুটবল খেলা হচ্ছে তা আদৌ কোন খেলা নয়, বরং গোলাকার একটা বল নিয়ে ২২ জনের কুস্তি মাত্র। এই কুস্তিতে জড়িত থাকেন রেফারী, অফিস কর্মকর্তা, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক মহল সহ আরও অনেক সুবিধাভোগীর দল। কারণ কোটি কোটি টাকার ব্যবসা এই লাইনে।
দুঃখিত সাকিব আল হাসান সহ বাংলাদেশি ক্রিকেট নিয়ে গড়ে উঠা পেইড-আনপেইড অনেক গ্রুপের এক্টিভিষ্টরা, আমার কাছে বাংলাদেশের ক্রিকেট এখন অতীতের রহমতগঞ্জ ও দিলকুশার খেলা ফুটবলেরই নব্য সংস্করণ মাত্র। এ খেলা নিয়ে কাউকে মহান বানানো অথবা ট্রল করার কোন কারণ দেখিনা। পৃথিবীর আর সব খেলাধুলার মানদণ্ডে বিচার করলে এটাই বাংলাদেশের সামর্থ্য, এটাই বাংলাদেশের যোগ্যতা। এ যোগ্যতা নিয়ে অতীতে অনেক চমক দেখিয়েছিল। কিন্তু সেদিন এখন অতীত। বিশ্ব ক্রিকেট সংস্থা ক্রিকেটকে বিশ্বায়নের চেষ্টা করছে। সে চেষ্টার অংশ হিসাবে এ খেলা এখন অনেক দেশে প্রমোট করা হচ্ছে। ডাচরা তারই ফসল। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রও মনোযোগ দিয়েছে এ খেলায়। এবং সময় আসবে যখন এ খেলার পরিসর ছড়িয়ে পরবে পৃথিবীর অনেক দেশে। তখন বিশ্ব পরিসরে বাংলাদেশকে দেখতে হাতে হারিকেন নিতে হবে। তৈরি থাকুন এমন সময়ের জন্যে।
সাকিব আল হাসানের অর্থায়নে সৃষ্ট সব গ্রুপকে আমি ব্লক করতে বাধ্য হচ্ছে। জটিল এক বিশ্ব পরিস্থিতিতে এসব সস্তা প্যাঁচাল পরিবেশকে দুর্গন্ধময় করে মাত্র।