আমার মত যারা মার্কিন গায়ক ব্রুস স্প্রীঙ্কস্টিনের ভক্ত তাদের জানা থাকার কথা গায়কের একটা নিক নেইম আছে। হ্যাঁ, বস নামেও তিনি পরিচিত। বস শব্দটা সামনে আসলে কেন জানি এই গায়কের নামটা প্রথম সামনে আসে। হতে পারে এক ধরণের এডিকশন।
তবে আজ যে বসের নাম শুনে আন্দোলিত হলাম সে বস আমাদের লোকাল। তাকে নিয়ে গর্ব না করলেই নয়। ৩১ বছর বয়সে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করে ১০০ কোটি টাকার মালিক হওয়া যায় তা আক্ষরিক অর্থে রাজকীয়। এ আয় যদি আয়-রোজগারের মানদণ্ড হিসাবে ধরা হয় তাহলে নিজকে নিয়ে হতাশ হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। এত লেখাপড়া করলাম, সমকালীন বিশ্বের অর্থনৈতিক সমীকরণ নিয়ে আলোচনা সমালোচনা করলাম, বিদেশের মাটিতে ভাল একটা চাকরি করলাম অথচ আয়-রোজগারে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করা একজন বাংলাদেশির ধারে কাছেও যেতে পারলাম না। নিজকে ধিক্কার দেয়া ছাড়া নিজের ব্যর্থতা ঢাকার আর কোন প্রেসক্রিপশন দেখছিনা।
আমার ব্যর্থতার তালিকাটা অবশ্য ছোট না। এই যেমনঃ
সাভার জেলার জনৈক আতিকুর রহমান আতিকের মত আমি উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হতে পারিনি। পারিনি সশস্ত্র একটা মোটর সাইকেল বাহিনী গড়ে তুলতে। অস্ত্রের মুখে গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে ব্যাংক ব্যালেন্স মোটা করতে পারিনি। স্থানীয়দের জমি জবরদখল, বাড়ি থেকে উচ্ছেদ, জাল দলিল, অবৈধভাবে একচেটিয়া ঠিকাদারি ব্যবসা করে উন্নয়নের জোয়ারে সাতার কাটতে পারিনি।
দৈনিক মানব জমিনের তথ্য বিশ্বাস করলে আমাদের বিশ্বাস করতে হবে, আতিক করেছেন একাধিক বিয়ে। আছে একাধিক বান্ধবীও। তাদের নিয়ে দুবাই-সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেন। ২০১৬ সালে ছাত্রলীগের সভাপতির পদ পাওয়ার মধ্যদিয়ে যেন আলাদিনের জাদুর প্রদীপ হাতে পান আতিক। এলাকাবাসী জানান, ঢাকা-১৯ আসনের স্থানীয় সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান ও উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজিবের হাত ধরে মূলত সাভারের রাজনীতিতে আতিকের নাটকীয় উত্থান।
কদিন আগে দেশের স্বঘোষিত প্রধানমন্ত্রীর ছেলে তার মায়ের জন্মদিন পালন করেছেন সুদূর মার্কিন মুলুকে নিজের গলফ কোর্সে। আমার জানা মতে এই মুলুকে গলফ কোর্সের মালিক হতে চাইলে বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে হয়। প্রবাসে একজন বাংলাদেশি অল্প বয়সে বিলিওয়নিয়র হতে পেরেছেন চিন্তা করলে কেন জানি গর্বে বুক ফুলে যায়। বলা হয় এই বাংলাদেশির বর্তমান সঞ্চয় প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ বাংলাদেশি টাকায় ২০ হাজার কোটি টাকার উপর।
নিজের জন্যে অবশ্যই করুণা হয়। দৈনিক প্রায় ১০/১১ ঘণ্টা কাজ করে মাস শেষে যা আয় করি তা দিয়ে জীবন কোন রকমে চলে যায়। অথচ এ দেশেরই কোন এক জায়গায় কোন এক বাংলাদেশি বিনা পুঁজিতে ২০ বিলিয়ন ডলার আয় করে জীবনের অর্থই বদলে দিয়েছেন। বলতে অসুবিধা নেই, ওরাই হচ্ছে আসল বস! কোথাকার কোন ব্রুস তাদের তুলনায় হাতের ময়লা মাত্র!