শিরদাঁড়া বেয়ে ঠাণ্ডা এক ধরণের অনুভূতি নেমে যায় নামটা মনে করলে।
আয়নাঘর! এমন একটা ঘরের কথা মগজে এলে কল্পনায় ভেসে উঠে একটা ঘর যেখানে চারদিকে কেবল আয়না আর আয়না। ডানে বামে যেদিকে তাকাই কেবলই আয়না। হরর মুভির মত একজন একটা হাসি দিলে লাখ লাখ হাসি একসাথে হেসে উঠে। পৈশাচিক হাসি। ভয় পাওয়ার হাসি।
নামটা কার মগজ হতে বের হয়েছিল remain to be seen। ২০২২ সালের ১৪ই আগস্ট সুইডেন ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম নেত্র নিউজ যখন এমন একটা ঘরের অস্তিত্ব প্রকাশ করে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিলো।
বাংলাদেশ সরকারের গোপন কারাগারের নাম আয়নাঘর। কেবল ঢাকা শহরে অস্তিত্ব পাওয়া যায় ২৩টি গোপন কারাগারের, যার একটির নাম আয়নাঘর।
২০০৯ সালে from the face of the earth নিখোঁজ হয়ে যায় দেশের ৬০০ ব্যক্তি। তাদের অনেকেরই ভাগ্য কোথায় শেষ হয়েছিল কেউ জানেনা। তবে কেউ কেউ জীবনের একটা অংশ কাটিয়ে এসেছেন এই আয়নাঘরে।
‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’ নামের এক আন্তর্জাতিক স্তরে মানবাধিকার নিয়ে কর্মরত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মুখপাত্র মীনাক্ষী গঙ্গোপাধ্যায়ের দাবি, বাংলাদেশ সরকারই এই ব্যক্তিদের নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার জন্য দায়ী।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলারের গেষ্টাপো বাহিনী এ ধরণের টর্চার সেলে ইহুদিদের নির্যাতন করতো। শরীর কংকাল না হওয়া পর্যন্ত কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের অন্ধকার কুঠুরিতে রেখে ঠেলে দিতো মৃত্যুর দিকে। জ্যান্ত মানুষকে গ্যাস চেম্বারে পুড়ে ছাই করে ফেলতো।
ভারতের প্রত্যক্ষ মদদে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর পরই শেখ হাসিনা গঠন করেন টর্চার সেল। কারণ একটা ব্রেইন ওয়াশড জেনারেশন তৈরির কাজে এ ধরণের সেল ছিল জরুরি। ভয় ভীতির রাজত্ব কায়েমে সক্ষম হলে সেখানে কেউ কথা বলতে সাহস পাবেনা এমনটাই ছিল উদ্দেশ্য।
বলাহয় সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল তারেক আহমেদ সিদ্দীকির মগজ হতে তৈরী হয় টর্চার সেলের ধারণা। এবং নিজে নিয়ন্ত্রণ করতেন এসব। এই মেজর জেনারেল হচ্ছেন শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার দেবর। ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার এই 'লোভনীয়' যন্ত্র আবিষ্কারের জন্যে জনাব সিদ্দীকিকে পুরস্কার হিসাবে বানানো হয় প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা।
এই রামও নাই, রাম রাজত্বও নাই। সব নিরাপত্তা তাসের ঘরের মত ভেসে গেছে জনরোষের কাছে। যাকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার জন্যে সহস্রাব্দির এই বর্বরতম আয়োজন তিনি এখন নিজ আয়নাঘরে বন্দী। যে অন্যায় ও অপরাধের রাজত্ব কায়েম করে অবৈধ ক্ষমতাকে লম্বা করেছিলেন তার জবাবদিহিতা তাকে একদিন করতেই হবে। এটাই ইতিহাসে অমেঘো শিক্ষা। ভবিষ্যৎ শাসকদের জন্যে এ শিক্ষা তরবারির মত মাথায় ঝুলবে। আয়নাঘরের পিশাচদের জনসম্মুখে বিচার এটাই হোক সময়ের দাবি।
https://www.anandabazar.com/photogallery/what-and-where-is-sheikh-hasinas-jail-for-political-prisoners-aynaghar-dgtl-photogallery/cid/1536994?slide=16