আপনি বলবেন একজন ধনী মানুষের জন্য আমার হিংসা হচ্ছে। আসলে ধনীর সংজ্ঞা কি তা একসাথে করতে কিছুটা হিমসিম খাচ্ছি। কত অর্থ-কড়ির মালিক হলে একজনকে ধনী বলা যাবে তা আমার অভিধানে না থাকায় হিংসা হওয়ার কোন কারণ দেখিনা।
তবে দরবেশ বাবা খ্যাত সালমান ফজলুর রহমান যে ধনী সে ব্যপারে কোন সন্দেহ নাই। নিজেদেরও একসময় ধনী ভাবতাম। কারণ সেই পাকিস্তান আমল হতে আমাদের বড় আকারের একটা বাড়ি ছিল। সাথে ছিল ২টা গাড়ি। লক্কড় ঝক্কর হলেও তা চলাচল করতো এবং আমরা ভাই-বোনরা মাথা উঁচু করেই সমাজে চলাফেরা করতাম। আমাদের শহরে যেদিন টেলিফোন ও গ্যাসের সাথে বাসিন্দাদের পরিচয় করিয়ে দেয়া হয় আমরা ছিলাম প্রথম দিকের গ্রাহক। সম্পদের তালিকায় যেদিন জুটমিল যোগ হয় সেদিন ধরেই নিয়েছিলাম আমরা আসলেই ধনী।
আমার বুঝাপড়ায় প্রথম ধাক্কাটা লাগে আব্বার মৃত্যুর পর। নগদ বলতে আমাদের তেমন কিছুই ছিলনা। জুটমিল ততদিনে জয়বাংলার দখলে। ব্যবসা বাণিজ্যের সবকটা দরজা বন্ধ। সম্পদ বলতে একটা ক্যালেন্ডার মিল সাথে কিছু জায়গা-জমি।
আমরা মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিলাম আবারও। তবে তা স্বল্প সময়ের জন্যে। দুর্নীতির ছোবল আবারও আমাদের গ্রাস করে নেয়। হারাতে হয় অনেক কিছু।
আব্বা ছিলেন পাকিস্তান আমলের পার্লামেন্ট মেম্বার। প্রতিষ্ঠিত হয়ে রাজনীতিতে নাম লিখিয়েছিলেন। এবং সে রাজনীতির কারণেই হাতছাড়া হয় অর্জিত সম্পদ। সময়ের ভারে নুয়ে পরা আমাদের জীর্ণ বাড়িটায় গেলে বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় এখানে একজন পার্লামেন্ট সদস্য বাস করতেন। অথবা পরবর্তী জীবনে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সভাপতি অথবা সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন।
দরবেশ বাবা খ্যাত সালমান এফ রহমানের সম্পদের কিছু তথ্য আজ প্রকাশ করেছে এক মাস আগে তাদেরই পদ-লেহনকারী পত্রিকা দৈনিক ইত্তেফাক।
বিশ্বধনী ইলন মাস্ক, জেফ বেজস, বিল গেইটস, মার্ক জুকেরবার্গ ও ওয়ারেন বাফেট সহ অনেকের সম্পদের তালিকা দেখেছি। জেনেছি এসব সম্পদ আহরণে তাদের ডেডিকেশনের কিচ্ছা-কাহিনী।
তাদের আয়-রোজগার আমাদের প্রেরণা যোগায়। জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণে ক্যাটালিস্ট হিসাবে কাজ করে। আজ সালমান এফ রহমান পরিবার ও তাদের দ্বিতীয় প্রজন্মের কাহিনী পড়ে নিজকে হতভাগা বৈ অন্যকিছু মনে হয়নি।
সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান এফ রহমানের বয়স কত তার হদিস করতে পারিনি। তবে জেনেছি তিনি লন্ডনে গ্রোসভেনর (অভিজাত পাড়া) ২৬.৫ মিলিয়ন পাউন্ডের ফ্লাটে বাস করেন। বাংলা টাকায় যার মূল্য ৪৩০ কোটি টাকা। T7-SFR ব্যান্ডের একটা প্রাইভেট জেট আছে যা অনেকটাই পুরানো। এ নিয়ে বন্ধু মহলে ট্রলের শেষ নেই। কেন আধুনিক একটা জেট কিনছেন এ প্রশ্ন অনেকের।
লন্ডনের আহমেদ শায়ানের একাধিক ফ্লাট আছে। তালিকায় আছে ৮৪৬ কোটি টাকায় কেনা ৬টি ফ্ল্যাট। কথিত আছে নিজের বিবাহ বার্ষিকী পালনের জন্যে ওমানে গিয়ে সালমানপুত্র ব্যায় করেছিলেন ১.৫ মিলিয়ন ডলার। বালাই বাহুল্য ভাই সোহেল রহমান সহ রহমান পরিবারের বাকি সবাই ব্রিটিশ নাগরিক।
একটা সত্য খুব অবাক করার মত। রহমান পরিবারের সবার আয়ের উৎস সেই বাংলাদেশ। এখান হতে কেবল লুটপাটই না, মানিলন্ড্রিং করে নিয়মিত তা নিয়ে যান পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ হয়ে ব্রিটেন ও আমেরিকায়। আয়-রোজগার বৈধ করার জন্যে খুলেছেন একাধিক কোম্পানি। এসব কোম্পানি নিবন্ধন ক্যারিবিয়ান দ্বীপের অনেক দেশে। বাংলাদেশের সবকটা কমার্শিয়াল ব্যাংক ছিল দরবেশ বাবার দখলে। খোদ বাংলাদেশ ব্যাংক হতে যে অংক চুরি হয়েছে তাতেও নাকি হাত ছিল রহমান ও শেখ পরিবারের। শেখ পরিবারের দিক হতে আবারও উঠে আসছে শেখ রেহানার নাম।
আমরা আসলে কোন শতাব্দীতে বাস করছি তার হিসাব অনেকের কাছেই ঘোলাটে হয়ে গেছে। একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে এমন লুটপাট ও ডাকাতি কেবল হাজার রজনীর আরব্য উপন্যাসেরই আধুনিক সংস্করণ বলে মনে হবে। শেখ পরিবারের ঘোর যতদিন না কাটবে ততদিন এসব তথ্য ও সংখ্যা হজম করতে অনেকেরই কষ্ট হবে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আসলেই কি পারবে এমন সব বাঘা ডাকাতদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করাতে? বিশ্বাস করতে কেন জানি কষ্ট হয়। ওরা টাকা দিয়ে দেশের সবাইকে কিনতে পারে, এ তালিকা হতে বিচার বিভাগও বাদ যায়না। সন্দেহটা সেখানেই।
বয়সের ভারে নুয়ে পরা আমাদের বাড়ির মুল দেয়ালটায় কান পাতলে আজও শোনা যাবে আওয়ামী দানবের উল্লাস। ১৯৬৯ সালে ওরা ঘেরাও করেছিল আমাদের বাড়ি। দলবেঁধে লাথি মেরেছিল দেয়ালের সবকটা ইটে।
কিশোর বয়স হলেও স্পষ্ট মনে আছে সময়গুলো। দানবীয় এসব উল্লাসের কারণ কেউ কোনদিন বলতে পারেনি। শুধু বলেছিল উপরের নির্দেশ।
আমি 'মব' জাস্টিস, অর্থাৎ গণধোলাইয়ে বিশ্বাস করিনা। কিন্তু এখন কেন জানি মনে হচ্ছে কিছু আওয়ামী লীগারদের এ ধরণের পাওনা হতে বঞ্চিত করা রাষ্ট্রীয় অপরাধ।