এ ধরনের একটা লেখা এ মুহুর্তে এপ্রোপ্রিয়েট হবে কিনা ভেবে পাচ্ছিনা। কিন্তূ ওয়াচ্ডগী করতে গিয়ে সময় ও বাস্তবতার সাথে সমঝোতা করতেও কোথায় যেন বাধে। যাদের জন্যে লেখাটা বদহজমের কারণ হবে অনুরোধ করব একটু ধৈর্য্য ধরতে। ব্লগ মানেই মনের মত লেখার আসর, এমনটা হলে এ মাধ্যমের মূল আকর্ষনটাই হয়ত কমে যাবে। পড়তে চাইলে মনট শক্ত করুন এবং পড়ুন। না চাইলে ধন্যবাদ।
পাঁচ খুনীর ফাঁসি নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় অব্যাহত রয়েছে, এবং তা বেশকিছু দিন চলবে তাতে সন্দেহ নেই। ফাঁসির আবেগ অংশটুকু তিথিয়ে আসলে আসবে এর বিচারিক প্রসংগ এবং এ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের বহুমূখী পান্ডিত্য চলতে থাকবে বহুদিন ধরে। তবে আওয়ামী সরকার ক্ষমতাসীন থাকাবস্থায় এ নিয়ে ব্যতিক্রমধর্মী কোন হৈ চৈ হবে এমনটা মনে করার কোন কারণ দেখছিনা। আমাদের দেশটাই এরকম, ক্ষমতা কথা বলে! ’ক্রাইম & পানিশমেন্ট’ উপন্যাসে লেখক ফেওদর দস্তায়ভ্সস্কি বলেছেন, একজন খুনীর মূল শাস্তিটা আসে জেল-হাজত, ফাঁসি হতে নয়, বরং তার ভেতরের অর্ন্তজ্বালা হতে। সদ্য ঝুলা পাঁচ আসামী ফাঁসিমঞ্চে যাওয়ার আগ পর্য্যন্ত ১৩ বছর হতে ২ বছর পর্য্যন্ত জেলের ঘানি টেনে গেছেন। নিজেরা না বল্লেও সন্দেহ নেই প্রতিদিন জ্বলেছেন মৃত্যু যন্ত্রণায়। ফাঁসি এক অর্থে তাদের জন্যে ছিল মুক্তি, যা বরন করা কষ্টের হলেও মুক্তি দিয়েছে প্রতিদিনের মৃত্যু-আতংক হতে।
প্রতিটা মানুষের জীবনই একটা পাঠশালার মত। এখানে কেউ ভাল পড়াশুনা করে, কেউবা মন্দের পূঁজারী হয়ে পা বাড়ায় পাপের পথে। সাড়া জীবন জেনে এসেছি মৃত্যু মানুষকে সবকিছুর উর্ধ্বে নিয়ে যায় এবং তার ইহ জনমের কৃতকর্মের মালিকানা চলে যায় সৃষ্টিকর্তার দরবারে। শেখ মুজিব হত্যা মামলার পাঁচ আসামীও এর ব্যতিক্রম ছিল বলে মনে করিনা। এরা পাঁপ করেছিল এবং ইহজগতে যতটা শাস্তি পাওয়ার তার সবটুকুই পেয়ে গেছে। প্রসংগটা টানছি একটা বিশেষ কারণে। ফাঁসিপর্ব সমাধা পূর্বক পাঁচ আসামীর লাশ জেলখানা হতে স্ব স্ব ঠিকানায় পাঠানোর পথে অনুষ্ঠিত হতে দেখলাম অদ্ভূত এক দৃশ্য। জুঁতা ছুড়ে মারা হচ্ছে লাশ বহনকারী গাড়ির দিকে, বৃষ্টির মত ছুটছে থু থু! শুনেছিলাম সেন্ট্রাল আফ্রিকার বাদশাহ Jean-Bédel Bokassa নিজ ভৃত্যদের জবাই করে তাদের মাংস দিয়ে তরকারী খেতে খুব পছন্দ করতেন। সে সময় আমরা পার হয়ে এসেছি। আজকের দুনিয়ায় এ ধরনের কাজ অপরাধ হিসাবে বিবেচিত হবে এবং এর জন্যে আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায় নিশ্চিত করেছে প্রয়োজনীয় শাস্তি। মৃত লাশের দিকে জুতা ছুঁড়ে মারার ভেতর বোকাসার পৈচাশিকতারই যেন ছায়া যেন দেখতে পেলাম। মানুষ হিসাবে আমরা কি এতটাই নির্মম হয়ে গেছি যে একটা লাশকেও শাস্তি দিতে হবে? হয়ত অনেকে বলবেন এই এরাই তো শেখ মুজিব এবং উনার পরিবারের লাশের প্রতি সামন্যতম অনুকম্পা দেখায়নি। মিথ্যা নয়, কিন্তূ ওরা এমনটা করেছিল বলেই তো ফাঁসিতে ঝুলেছে। তা হলে ওদের আর আমাদের মধ্যে পার্থক্যটাই বা রইল কোথায়? কর্নেল শাহরিয়ার রশিদের জানাযায় হাজির ছিলেন এমন একজনের সূত্র হতে জানতে পারলাম মৃত্যুর পর বেচারার চোখ, হূৎপিন্ড, কিডনী সহ পূনঃব্যবহারযোগ্য সব অংগপ্রত্যংগ খুলে রাখা হয়েছিল ঢাকাতেই। যে গাড়িতে লাশ পরিবহন করে হয়েছে তাতে বইছিল রক্তের নদী, সদ্য জবাই করা মাছের মত লাশ এপাশ ওপাশ করছিল গাড়িতে। জানাজা সহ লাশের স্বাভাবিক গোসলেও নাকি বাধা দেয়া হয়েছিল। সবই শোনা কথা, হতে পারে অনেকটা অতিরঞ্জিত। কিন্তূ একেবারে উড়িয়ে দেয়ার মত সূত্র ছিলনা, তাই রটানো কথা সবাটাই অসত্য ছিল মেনে নিতে পারছিনা। আমার এ মমতা জীবিত শাহরিয়ারের জন্যে নয়, বরং লাশ শাহরিয়ারের জন্যে।
খুন ও খুনী - এগুলো কোন সভ্য সমাজের এলিমেন্ট হতে পারেনা। তবু এগুলোর সাথে আমাদের মোকাবেলা হয়, এবং সমাজকে এসব হতে মুক্ত রাখতে ফাঁসির মত চরম শাস্তিকেও আমাদের স্বাগত জানাতে হয়। ১৯৭৫’এ ঘটিত পাপের শাস্তি ২০১০ সালও যে লম্বা সময় নয়, তার প্রমান হয়ে গেল সাম্প্রতিক ফাঁসি। এ ফাঁসি ভবিষৎ পাপের জন্যে শিক্ষা হয়ে থাকবে, এ জন্যেই দেশে দেশে কাজ করে আইন ও বিচার ব্যবস্থা। ১৯৭৫’এর শেখ মুজিব হত্যা রাজনৈতিক হত্যা হলেও এর বিচার পর্ব রাজনৈতিক হওয়ার কথা নয়। কিন্তূ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এটাকে রাজনৈতিক পর্ব বানিয়ে এ হতে ফায়দালুটার চিরন্তন ধারাতেই ফিরে যাচ্ছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। ফারুখ রশীদেদের ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়েছে বলেই আমাদের বিচার ব্যবস্থাকে স্বাধীন-সার্বভৌম বলে যারা লাইসেন্স দিচ্ছেন তাদেরকে আগামী নির্বাচন পর্য্যন্ত ধৈর্য্য ধরার অনুরোধ করব । ক্ষমতার পালাবদলই অনেক প্রশ্নের উত্তর দেবে। আসুন অপেক্ষা করি সে দিনটা পর্য্যন্ত।