নিন্দা, প্রতিবাদ ও শোকবানীর ঢেউয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ভাসতে দেখা যায়নি অনেকদিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ১৮মাস বন্ধ থাকার পর আর্ন্তদলীয় কোন্দলে অস্ত্র ও পেশী প্রদশর্নীর পাশাপাশি রক্তও ঝরছিল একটু আধটু। এ বিবেচনায় আবু বকরই বোধহয় প্রথম লাশ। পরি পরি করেও পরছিলনা, আহত, মারাত্মক আহত, পংগুত্বের মাঝেই সীমাবদ্ব ছিল লাশের দৌঁড়। কিন্তূ পূর্ণাংগ লাশ যে পরতে যাচ্ছে এ ব্যাপারে কারও কোন সন্দেহ ছিলনা। আবু বকর সে অপেক্ষায় ইতি টেনে নতুন করে জানিয়ে দিয়ে গেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব একেবারেই ডালভাত। ক্যাম্পাসের রাজনীতিকে যারা ঐতিয্যের ডান্ডায় বেধে ঝান্ড হিসাবে মূল্যায়ন করেন, তাদের কাছে আবু বকরের লাশ কেন এতটা রাগের, ক্ষোভের বুঝার কোন উপায় নেই। বাংলাদেশের রাজনীতিতে লাশ একটি অতিমূল্যবান ও এফেক্টিভ ফ্যক্টর, আমাদের অতীত ইতিহাস কি তাই বলেনা? মৃত আবু বকর এ বিবেচনায় নিজকে আনলাকি ভাবতে পারেন, কারণ উনার লাশ আর্ন্তদলীয় কোন্দলের লাশ, যা আন্দোলন দাঁনা বেধে উঠার লাশ হিসাবে কাজ করতে পারবে না।
রাজনৈতিক লাশ নিয়ে বিগত জোট সরকারের তথ্যমন্ত্রী ব্যরিষ্টার নাজমুল হুদার একটা মূল্যবান মন্তব্য আছে, যা মনে করে শুশীল সমাজ কিছুটা হলেও স্বস্তি পেতে পারেন। ‘সন্ত্রাষীরা নিজদের ভেতর গোলাগুলি করে মরে সরকারের কাজকেই সহজ করে দিয়ে যায়’। হুদা সাহেবের এ ধরনের বেহুদা মন্তব্যে অনেকদিন পর্যন্ত বিমোহিত ছিলাম। কিন্তূ যেদিন শোনলাম উনার দুই কন্যা লন্ডনে মাসিক ২০ লাখ টাকা খরচ করে লেখাপড়া করছেন, বুঝতে বাকি থাকেনা এ ধরনের মন্তব্যের উৎস কোথায়। বলা হচ্ছে মৃত আবু বকর ছিল ইসলামের ইতিহাস বিভাগের মেধাবী ছাত্র ও ছাত্রলীগের ক্যাডার। একটা সত্য খটকা লাগায়, একজন মেধাবী ছাত্র যখন ইসলামের ইতিহাস নিয়ে লেখাপড়া করতে যায় কোনটা তার কাছে বেশী শিক্ষনীয়, ইসলামের শিক্ষা না নেত্রীর তথাকথিত আদর্শ? যদি নেত্রীর আদর্শই মেধা মূল্যায়নের মানদন্ড হয়ে থাকে, তাহলে বুঝতে হবে, হয় আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় কোন গোলমাল আছে, অথবা ইসলামের ইতিহাস একজন মেধাবী ছাত্রকে দলীয় ক্যাডারত্ব হতে দূরে রাখায় কাজ করছেনা। আবু বকরের মৃত্যুকে বিশ্লেষন করতে গেলে এ চ্যাপ্টারটুকু বিবেচনায় আনার জন্যে শুশীল সমাজকে অনুরোধ করব।
আমার নিজের কলেজ ঢাকা কলেজে ক’দিন ধরেই ক্ষমতসীন দলের ছাত্ররা অস্ত্রের মুখে কর্তৃপক্ষকে জিম্মি করে রেখেছে ভর্ত্তি বানিজ্যের কারণে। এ কথা কারও কাছে নতুন তথ্য নয় ঢাকা কলেজে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্ররাজনীতির মূল কাজটা কি। নিউ মার্কেট হতে শুরু করে সমগ্র এলাকাজুড়ে চলে চাঁদাবাজির মহোৎসব, বছরে ’আয়’ হয় কোটি কোটি টাকা। এ টাকা হতে নিজেরা ভাগ পায়, উপরওয়ালাদের দিতে হয় মোটা অংকের বখড়া, এবং ভীত গাড়তে হয় ভবিষৎ রাজনীতির পাকা সিঁড়ি। এ সিঁড়ি বেয়ে যাওয়া যায় ক্ষমতার খুব কাছে, নিঃশ্বাষ অনুভব করা যায় স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর। একজন আমানুল্লাহ আমান হতে পারে এর জ্বলন্ত উদাহরন। উপড়ে উঠার এ লড়াই মসৃন হবে এমনটা আশাকরা হবে অন্যায়। কারণ ইসলামের ইতিহাস বিষয়ে ডিগ্রী প্রাপ্তির পর কি ভবিষৎ অপেক্ষা করছিল আবু বকরের জন্যে? যেন তেন একটা চাকরী? মাথা গোজার একটা ঠাই? জন্ম-মৃত্যুর স্বাভাবিক নিশ্চয়তা? কোনটাই না। অথচ ছাত্ররাজনীতির নেত্রীত্ব তাকে এনে দিতে পারত বিত্ত বৈভব্যের প্রাচুর্য, খুলে দিতে পারত ক্ষমতার সোনালী দুঁয়ার। সমসাময়িক রাজনীতির প্রথম সাড়ির ছাত্র ও যুব নেতাদের সারিবদ্বভাবে উলংগ করা গেলে তাদের নেত্রী পূঁজার লেবাস খসে যা বের হবে তা কেবলই টাকা, কেবলই সম্পত্তি আর প্রাচুর্যের ফোয়াড়া।
কথার পেছনে কথা গেঁথে অনেক কথাই বলা যাবে, কিন্তূ তাতে কাজের কাজ কিছু হবে বলে মনে হয়না। দু’দিন পর সব ঠান্ডা হয়ে আসবে, আবু বকরের ঠাঁই হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাশের তালিকায়। আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কোনভাবেই রাজনীতি হতে রেহাই দেয়ার উপায় নেই কারণ অনেক রাঘব বোয়ালদের স্বার্থ জড়িত এতে। লাল-নীল-সাদা শিক্ষক হতে শুরু করে ক্ষমতার শীর্ষে থাকা প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতাও অনেকাংশে নির্ভর করে ছাত্ররাজনীতির উপর। ’৫২’র ঐতিয্য, ৭১’এর শৌয্য বীর্য্য, স্বৈরতন্ত্র উৎখাতের অধ্যায়, গণতন্ত্র পাহাড়া দেয়ার ঐতিহাসিক দায়িত্ব, এত সব সোনালী অতীত আর বর্তমানকে পদদলিত করে শিক্ষাংগন হতে রাজনীতিকে নির্বাসনে পাঠানো হবে জাতির সাথে ’বেঈমানী’ করা। তাহলে কি আবু বকরদের লাশ ঐতিয্যের কাফনে দাফন করে দায়মুক্তি পাওয়ার সাংস্কৃতি চলতেই থাকবে? হয়ত তাই, কিন্তূ এ ব্যাপারে আমার একটা প্রস্তাব আছে।
হিসাব কষে দেখা গেছে ছাত্র নেতাদের অনেকেরই বয়স চল্লিশের উপর। অনেকে আবার পিতা হতে পিতামহ পর্যন্ত হয়ে গেছেন। আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর তনয় সজীব ওয়াজেদ জয়ের বয়স সে তুলনায় এমন কিছু নয়। আসুন দাবী জানাই প্রধানমন্ত্রীর দরবারে, জয় ওয়াজেদকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পূর্বক ছাত্রলীগের প্রধান বানানো হোক। আমরা দেখতে চাই প্রধানমন্ত্রীর তনয় হাতে কাটা রাইফেল নিয়ে লড়াই করছেন মাতা ও পিতামহের আদর্শ টিকিয়ে রাখার জন্যে। খালেদা জিয়ার দুই সন্তানকে যথাক্রমে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা কলেজে ভর্তি করে দায়িত্ব দেয়া হোক ছাত্রদলের। যেহেতু ঐতিয্যের ছাত্র রাজনীতি কিছুতেই আমাদের শিক্ষাংগন হতে দূর করার নয়, তাহলে চলুক সে ঐতিয্য। এবং সে ঐতিয্যের অগ্রদূত হিসাবে সামনে আসুক নেতা-নেত্রীদের সন্তানগন। ভার্জিনিয়ার আয়েশী জীবন শেষ হোক, লন্ডনের ফিউজেটিভ জীবনের সমাপ্তি হোক, আমরা সেনাপতি হিসাবে যোগ্য সেনাদের চাই, আবু বকরদের মত তৃতীয় সাড়ির সেনাপতি নয়।
দ্রষ্টব্যঃ ভিন্ন সূত্র বলছে ভিন্ন কথা। কেউ বলছে আবু বকর ছিল সাধারন ছাত্র। তদন্ত শেষে সত্য বেরিয়ে আসলে যদি কারও কাছে ক্ষমা চাইতে হয় তাহলে মৃত আবু বকরের কাছেই চাইব, অন্য কারও কাছে নয়!
- আবু বকরের আসল খুনী
- প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি কামনা ঢাকা কলেজের শিক্ষকদের
- কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে ছাত্রলীগের দুই পক্ষে দফায় দফায় সংঘর্ষে আহত ১০
- শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা গাড়ি ভাঙচুর করেছে
- ছাত্রলীগের হামলায় ছাত্রমৈত্রীর নেতা খুন
- ছাত্রজীবন, বাংলাদেশী ছাত্রজীবন
- অদ্ভূত এক উটের পিঠে সওয়ার হয়ে চলছে বাংলাদেশ
- জানার শেষ নাই, জানার চেষ্টা বৃথা তাই
- হে আমাদের ছাত্র......হে আমাদের শিক্ষা!
- এমন শিক্ষা আমাদের প্রয়োজন নেই