সীমান্তের এপার ওপার - পর্ব ২

Submitted by WatchDog on Wednesday, April 22, 2009

ব্ল্যাক-মেইলিং’এর এমন মুখোরচক গল্পের সাথে একেবারে যে পরিচয় ছিলনা তা নয়, কিন্তূ তা সীমাবদ্ব ছিল কেবল খবরের কাগজে। কিন্তূ এ ধরনের অভিজ্ঞতা সাক্ষাৎ যমদূত হয়ে আমার নিজের সামনে হাজির হবে স্বপ্নেও কল্পনা করিনি। একদিকে অফিসে আমার সততা, অন্যদিকে দু’টো বাসা পর ভালবাসার মানুষটার কথা মনে হতেই মনে হল আমি ঘামছি। ভারি বৃষ্টির কারণে অনেকেই আফিসে আসতে পারেনি সেদিন, আর যার কথা ভেবে বেশী চিন্তিত হচ্ছিলাম সে ছিল রাজশাহীতে, ইঞ্জিনীয়ারিং কলেজে ভর্তি পর্ব সমাধানে ব্যস্ত। প্রাথমিক ধাক্কা সামলে বুকে সাহষ নিয়ে মুখোমুখি হলাম বাংলাদেশের রাজনৈতিক জারজ সন্তানদের। এবং এটা ছিল এ ধরনের অনেক মুখোমুখির শুরু মাত্র।

আমার জন্যে অপেক্ষা করছিল রাজ্যের বিস্ময়। এক; রিং লীডার যার নেত্রীত্ত্বে স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনারের ছত্রছায়ায় এ লাভজনক ব্যবসা প্রসার লাভ করছিল, সম্পর্কে সে আমার মামা, মার আপন খালাত ভাই। বহু বছর মামাবাড়ি যাওয়া হয়নি বলে এমন আজরাইল উত্থানের সাথে পরিচিত হওয়ার সৌভাগ্য হয়নি আমার। মামা এ জন্যে হাজার আফসোস করতে লাগলেন। সাংগ পাংগদের বের করে দুপা জড়িয়ে রাজ্যের মাফ চাওয়া শুরু করল আমার মামা। কথা দিতে হল আমার জেলা শহরের কাউকে এ ঘটনার কথা জানতে দেবনা। আগামী নির্বচনে বিএনপির আশীর্বাদ নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা তার। সব ভন্ডুল হয়ে যেতে পারে আমার গল্পে। তা ছাড়া আমাদের পারিবারিক প্রত্যাঘাত সামলাবার মত কোমরের জোড় আমার মামুর যে ছিলনা তা বলাই বাহুল্য।

দুই; গল্পের নায়িকার প্রসংগ আসতেই জানতে পারলাম চমকপ্রদ এক কাহিনী। বাংলাদেশের রাজপুটিন আজিজ মোহম্মদ ভাইয়ের সুন্দরী নেটওয়ার্কের সে ছিল পোষ্য সদস্য, ব্যবসার অন্যতম অংশীদার ছিল তার মা। কালের চক্রে এই টিভি সুন্দরীর সাথে ভিন্ন পরিস্থিতীতে দেখা হয়েছিল, কথা হয়েছিল তার মার সাথে। সে কাহিনী লিখতে গেলে বিশাল এক উপন্যাসের সূত্রপাত হয়ে যাবে, যার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের রাজনীতি এবং এর সূবিধাভোগীদের নিয়ে স্ল্যাম ডগ মিলিওনিয়ারের মত মহাকাব্যিক এক ছায়াছবি বানানো যাবে হয়ত। তুলে রাখা যাক এ কাহিনী অন্য এক সময়ের জন্যে। এ ফাকে বলে রাখা ভাল, এ ঘটনার পর অফিসে চাঁদাবাজি ভোজাবাজির মত মিলিয়ে যায়।

মন এমনিতেই তিতিয়ে ছিল ঢাকা শহরের প্রতি, মডেল কন্যার ঘটনাটা সিদ্বান্তটা এগিয়ে আনতে সাহায্য করল। আমি ঢাকা ছেড়ে নিজ শহরে চলে যাচ্ছি। কোটি মানুষের ঢাকা শহর আমার মত নগন্য একজনকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় জানাবে তার কোন সম্ভাবনাই ছিলনা, বাস্তবেও হল তাই। চোরের মত পালিয়ে গেলাম এ শহর ছেড়ে। ক’টা মাস আগেও জীবন ছিল মস্কো, লন্ডন, বার্লিন এবং ইউরোপের বিভিন্ন জমকালো শহর ভিত্তিক, অথচ ঢাকায়ও আমার জায়গা হলনা আজ। যাওয়ার আগে এক বন্ধুর পরামর্শে হাজার দশেক টাকা খরচ করে স্কীল মাইগ্রেশনের জন্য গুলসানস্থ অষ্ট্রেলিয়ান দূতাবাসে একটা দরখাস্ত জমা দিয়ে গেলাম।

যে বাড়িতে আমার জন্ম, যেখানে আমি বড় হয়েছি, বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া যে মেঘনা নদীর কুল ঘিরে বেড়ে উঠেছে আমার শৈশব, কৈশোর, সে মাটিতে আমি ফিরে গেলাম। মাঝ খানে অনেকগুলো বছর পেরিয়ে গেছে, নদীতে গড়িয়ে গেছে অনেক পানি। দু’টা মাস শুধু ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিলাম; ইউরোপের ক্লান্তি, ঢাকা শহরের ক্লান্তি সব ধুয়ে মুছে কোন এক সুন্দর ঝলমল সকালে হাজির হলাম পারিবারিক শিল্প-প্রতিষ্ঠানে। এখানে আমাকে কাটাতে হবে পরবর্তী বেশ ক’টা বছর, মুখোমুখি হতে হবে রাজনীতির কদার্য এবং কুৎসিত চেহারার সাথে। আমরা যারা বাংলাদেশের রাজনীতিকে নেত্রী এবং দল ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ভেবে মূল্যয়ন করতে অভ্যস্ত, তাদের জন্যে আমার পরবর্তী লেখাগুলো হতে পারে চক্ষু উন্মোচনের শুরু হিসাবে।

চলবে...

ভালো লাগলে শেয়ার করুন