জেসমিন শামীমা নিঝুম, ২১ শতাব্দীর বাংলাদেশী নারী!!!

Submitted by WatchDog on Saturday, March 13, 2010

Eden College, Dhaka, Bangladesh

খবরে প্রকাশ আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় মারামারি, ভাংচুর ও শক্তি প্রদর্শনের ঘটনা ঘটেছে ঢাকার ইডেন কলেজে। রক্তক্ষয়ী এ সংঘর্ষে ৬ জন ছাত্রী আহত ও কমপক্ষে ১২টি কক্ষ ভাঙচুরের শিকার হয়েছে। বিবাদমান দুই গ্রুপ একে অপরকে অভিযুক্ত করছে সাধারণ ছাত্রীদের অনৈতিক কাজে প্ররোচনা দেয়ার। অভিযোগে প্রকাশ, ভর্তি বানিজ্য ও সাধারণ ছাত্রীদের কুপ্রস্তাব দেয়ার তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে কলেজ ছাত্রলীগের সভানেত্রী জেসমিন শামীমা নিঝুম। দুই পক্ষের নেতা-কর্মীরা হকিস্টিক ও রড নিয়ে শক্তির মহড়া দেয় প্রশাসনিক ভবনের সামনে।

উপরের ঘটনায় আপনারা যারা অবাক হচ্ছেন তাদের সাথে দ্বিমত করতে চাই আমি। ছাত্রীদের Rambo স্টাইলের লড়াই আসলেই কি অবাক হওয়ার মত কোন ঘটনা ছিল? গেল সপ্তাহে জাতীয় সংসদে যা ঘটে গেল তারই কি প্রতিচ্ছবি ছিলনা এ লড়াই? সার্বিক বিচারে দেশীয় রাজনীতিকে ব্যক্তি ও পারিবারিক দাসত্বের টেলেনভেলা বল্‌লে আশাকরি খুব একটা বাড়িয়ে বলা হবেনা। সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ’র ’লাল সালু’ উপন্যাসের মত মৃত পিতা আর স্বামীকে পীর বানিয়ে হাসিনা আর খালেদা নামের দুই মজিদ মিয়া রাজনীতির ঘোলা পানিতে যে মৎস শিকার করছেন তার অপর নামই বাংলাদেশের রাজনীতি। শিকারের এ মহোত্সবে উচ্ছিষ্টের মূলা ঝুলিয়ে মুরীদানের কাফেলায় যোগ করানো হয়েছে ছাত্র, শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিচারক সহ দেশের গোটা শিক্ষিত সমাজকে। সংগত কারণেই মৃত নেতা দ্বয়ের মহিমা আর গুন কীর্তনের বৈরিতার ভেতর বলি হচ্ছে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা, সমাহিত হচ্ছে বিচার ব্যবস্থা, শিক্ষাঙ্গনে আবর্জনার মত তৈরী হচ্ছে বিকলাঙ্গ যুব সমাজ।

সীমিত সম্পদের দেশ বাংলাদেশ। স্বাভাবিক জীবনের এখানে নিশ্চয়তা নেই। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ও কর্মসংস্থানের পরিধিও এখানে বিপজ্জনকভাবে সীমিত। ১৫ কোটি মানুষকে বেঁচে থাকার জন্যে এখানে লড়াই করতে হয়। ইডেন কলেজের ছাত্রীদের লড়াইও ছিল তাদের বেঁচে থাকার লড়াই। যেমনটা শেখ হাসিনা লড়ছেন খালেদা জিয়ার বিরুদ্বে, খালেদা লড়ছেন হাসিনার বিরুদ্বে, লীগ লড়ছে দলের বিরুদ্বে, আদালতে লড়ছেন আইনজীবীরা, সংসদে লড়ছেন সাংসদরা। এক কথায় গোটা দেশজুড়ে এখন লড়াই, অসৎ পথে দ্রুত ভাগ্য ফেরানোর লড়াই। চাঁদাবাজির ১৪টা মামলা মাথায় নিয়ে ক্ষমতাসীন হয়েছিলেন আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। গেল এক সপ্তাহে গোপালগঞ্জের আ’লীগের সাবেক সভাপতি বিচারপতি শামশুল হুদার কোর্টে একে একে বাতিল হয়ে গেল সবগুলো মামলা। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী যদি পুকুর চুরি করে পার পেতে পারেন তাহলে ইডেন কলেজ ছাত্রীরা কেন সামান্য চাঁদাবাজি আর দেহ ব্যবসা করে পার পাবে না তা বিচারের ভার পাঠকদের উপরই ছেড়ে দিলাম।

যতদূর জানি ভ্যাটিকান ও কসভো ছাড়া জাতিসংঘ কর্তৃক স্বীকৃত দেশের সংখ্যা মোট ১৯২। আর্থ-সামাজিক মানদণ্ডে বাংলাদেশের তুলনায় অনুন্নত ও গরীব দেশের সংখ্যাও পৃথিবীতে কম নয়। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো নির্বিশেষে ১৯৪টা দেশের প্রায় সব কটাতেই শিক্ষা ব্যবস্থাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে সময়ের চাহিদা মেটাতে পারে এমন প্রজন্ম গড়ে তোলার চেষ্টা চল্‌ছে। বাংলাদেশই হয়ত এর একমাত্র ব্যতিক্রম। এখানে শিক্ষার আসল গুরুত্ব লেখাপড়ায় নয়, গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাকে সাজানো হয়েছে বিবাদমান দুই পরিবারের চাহিদা মেটানোর জরায়ু হিসাবে। বিশ্বের দ্বিতীয় কোন দেশে রাজনৈতিক মেরুকরণের কারণে ছাত্রীরা হাতাহাতি করছে এমন ঘটনা অশ্রুত, অকল্পনীয় ও অবিশ্বাস্য।

জয় হোক দেশীয় রাজনীতির!!!

ছবি: প্রথম আলো


ভালো লাগলে শেয়ার করুন