ড্রাগ, সুন্দরী আর সাগর পারের দেশ কলোম্বিয়ায়, ২য় পর্ব

Submitted by WatchDog on Tuesday, January 12, 2010

Columbia - South America

লিমা হতে বগোটা ৩ঘন্টার ফ্লাইট। এভিয়েন্‌কা এয়ার লাইন্‌সের লক্কর ঝক্কর মার্কা বিমানটা ঘুড্ডির মত গোত্তা খেতে খেতে উড়ে গেল এন্ডিসের উপর দিয়ে। বগোটার এল ডোরাডো এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করার সময় মাথার উপর লাগেজ কেবিন হতে দু’একটা লাগেজ ছিটকে পরল। ভয়বহ আতংকের সৃষ্টি হল কেবিনে। এ সবের সাথে আমার পরিচিতি বহু দিনের, তাই খুব একটা বিচলিত হলামনা অপ্রত্যাশিত টার্বুলেন্সে। এক নাগাড়ে ১৫ ঘন্টা এয়ার ট্রাভেলের অভিজ্ঞতাও আছে ঝুলিতে, তাই তিন ঘন্টার জার্নি শরীরের উপর তেমন কোন প্রভাব ফেলতে পেরেছে বলে মনে হলনা। লাগেজ নিয়ে এয়ারপোর্ট হতে বের হতে আরও আধা ঘন্টা লেগে গেল। লিমার সাথে বগোটার পার্থক্যটা বিমান হতে বের হলেই চোখে পরতে বাধ্য। যতবার লিমা গেছি একবারের জন্যেও সূর্য্যের দেখা পাইনি শহরটার আকাশে। কুয়াশার নীরবচ্ছিন্ন রাজত্ব। এন্ডিসের চূঁড়ায় খন্ড খন্ড অলস মেঘ প্রকৃতিতে অন্যরকম প্যানোরমা সৃষ্টি করলেও দিনের পর দিন একই দৃশ্য এক ধরনের ডিপ্রেশন তৈরী করে ফেলে, সূর্য্যের আলোর জন্যে এক সময় মনটা ছটফট শুরু করে দেয়। বগোটায় ঠিক উলটো, বছর জুড়ে রৌদ্রের একচেটিয়া রাজত্ব। গায়রে জ্যাকেটটাও খুলতে হল গরমের কারণে।

এল ডোরাডো এয়ারপোর্টটা একেবারেই সাধারণ মানের এয়ারপোর্ট, দূর হতে একচালা টিনের ঘর বলে ভূল হতে পারে। শুধু এয়রাপোর্টেই নয় বগোটা শহর জুড়েই সবুজের সমারোহ, যা দেশটাকে প্রতিবেশী পেরু হতে আলাদা করে দেয়। লাগেজ নিয়ে এয়ারপোর্ট হতে বেরিয়ে যাওয়ার মুখেই পথরোধ করে দাঁড়াল এয়ারপোর্ট সিকিউরিইটি, চেক করবে আমাদের। ভূলেই গিয়েছিলাম কলম্বিয়া নামের দেশটার সাথে ড্রাগ শব্দটার নিবিড় সম্পর্ক। কোন বাক্য বিনিময় হলনা দশ মিনিট স্থায়ী ঝড়ো তল্লাশীর সময়। ওদের লক্ষ্য ছিল ড্রাগ, ট্রেইনড্‌ কুকুর সহ বেশ কিছু নতুন ডিভাইস দেখলাম এ কাজে ব্যবহার করতে। ৯টা বেজে গেল ঝামেলা চুকিয়ে এয়ারপোর্ট হতে বেরুতে বেরুতে।

Columbia - South America

সান্তা মার্তার কানেকটিং ফ্লাইট দুপুর ২টায়, ৫ঘন্টা এয়ারপোর্টে বসে কি করব ভাবনায় পরে গেলাম। অনেকগুলো অপশন বিবেচনা শেষে সিদ্বান্ত নিলাম এয়ারপোর্ট লকারে লাগেজগুলো জমা রেখে শহর দেখতে যাব। এয়ারপোর্ট হতে শহরের দূরত্ব খুব হলে ৬/৭ কিলোমিটার । লোকাল বাস সার্ভিস খুবই উন্নত মনে হল। সীমিত যাত্রী ও সময় জ্ঞানের কারণে লোকাল ট্রানস্‌পোর্টের সার্বজনীন ব্যবহার চোখে পরার মত। সিদ্বান্ত নিলাম আমরাও লোকাল বাস ধরে শহরে যাব। এয়ারপোর্ট কাউন্টারে ডলার ভাংগাতে গিয়ে একেবারেই ভড়কে গেলাম, লম্বা একটা ফর্ম পূরন করতে হবে। ডলার ভাংগাতে পাসপোর্টের দরকার হয় ব্যাপারটা দক্ষিন আমেরিকার অন্যকোন দেশে দেখেছি কিনা মনে করতে পারলামনা। খুটিয়ে খুটিয়ে অনেক প্রশ্ন করল, উত্তর দিলে হল অনেকটা আসামীর কায়দায়। মনে মনে প্রচন্ড বিরক্ত হলাম। বডি ল্যাংগুয়েজ দিয়ে তা প্রকাশ করতে চাইতেই ক্যাশিয়ার জানাল কলম্বিয়ায় ডলার পরিবর্তন খুব একটা সহজ কাজ নয়, এর সাথে ড্রাগ সংশ্লিষ্ট বহুবিধ সমস্যা জড়িত। ১০০ ইউএস ডলার ভাংগাতেই মনে হল কলোম্বিয়ান পেসোর মিলিয়নিওর হয়ে গেছি আমি।

পশ্চিমা দুনিয়ার যে কোন বাসের মত ঢুকার মুখে ভাড়া পরিশোধ করে বসে পরলাম ঝক ঝকে বাসটায়। আমার গিন্নীর মাতৃভাষা স্প্যনিশ, তাই কোন ষ্টপেজে নামলে শহর সেন্টারে নামা হবে তা বের করতে অসূবিধা হলনা। অফিস আওয়ার, তাই চারদিকে মানুষের ব্যস্ত চলাফেরা। এসি১-২৬(অটোপিস্তা এল ডোরাডো) বুলোভার্ড ধরে শহরের কেন্দ্রস্থলে নামতেই মানুষের জোয়াড়ে ভেসে যাওয়ার মত অবস্থা হল আমাদের। চারদিকে মানুষ আর মানুষ, হাটছে উদ্দেশ্যহীনভাবে। যে জিনিষটা প্রথমে চোখে পরতে বাধ্য তা হল, ধারালো ছুড়ির মত কিশোরী হতে ৬০ বছর বয়সী মহিলাদের শরীর। মনে হল ঈশ্বর নিজ হাতেই বোধহয় কলম্বিয়ান সুন্দরীদের তৈরী করছেন। দীর্ঘশ্বাষ ফেলা ছাড়া দ্বিতীয় কোন রাস্তা খোলা ছিলনা। আমার গিন্নী নিজেও বোধহয় মুগ্ব হল ঈশ্বরের এমন শৈল্পিক সৃষ্টীতে। আমার দিকে তাকিয়ে মনের অবস্থাটা বুঝার চেষ্টা করল, মৃদু হাসিতে ছিল নো অবজেকশনের সিগন্যাল।

আমরা যাব এসি৬৮’র (দ্যাল্‌ কংগ্রেসো ইউকারিসতিকো) উপর সাইমন বলিভার পার্কে। নিশানা ঠিক না করেই এলোমেলো হাটতে শুরু করলাম কলোম্বিয়ার রাজধানী বগোটার খোলা আকাশের নীচে।
- চলবে


ভালো লাগলে শেয়ার করুন