জীবন নদীর গল্প - পর্ব ১

Submitted by WatchDog on Saturday, February 15, 2020

গল্প উপন্যাস লেখা আমার কাজ না। চাইলেও হয়ত লিখতে পারবনা। যখন একা ছিলাম এবং পৃথিবীর এ প্রান্ত হতে ও প্রান্তে পাখির মত উড়ে বেড়াতাম অভিজ্ঞতাগুলো শেয়ার করার একটা তাগাদা অনুভব করতাম। ব্লগ দুনিয়ার শুরুর দিকে বেনামে নিজের একটা অবস্থান তৈরি করে নিয়েছিলাম রাজনৈতিক লেখালেখি দিয়ে। কিন্তু রাজনীতির বাইরেও উপভোগ করার মত আমার একটা জীবন ছিল। সেটা মূলত ইউরোপে বার বছর, অস্ট্রেলিয়ায় পাঁচ বছর এবং ফাঁকে জন্মভূমিতে প্রায় পাঁচ বছর বাস করার বিরল অভিজ্ঞতাকে ঘিরে।

হবে হয়ত গেল শতাব্দীর শেষ বছরের ঘটনা। সবে নাগরিকত্ব নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ী হওয়ার সব রাস্তা এক্সপ্লোর করছি। থাকি সিডনির পূর্বদিকের হিলসডেল এলাকায়। দুই বেডরুমের একটা ফ্লাটে সজল আমার রুমমেট। ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলসের (UNSW) আইটি ডিপার্টমেন্টের ছাত্র সজলের সাথে পরিচয় নিয়েও লম্বা একটা লেখা দাড় করানো যাবে। যদিও তার প্রেক্ষাপট ও পরিপার্শ্বিক চরিত্রগুলোই ডমিনেট করবে ঘটনাপ্রবাহ। ইংল্যান্ড হতে এমবিএ শেষ করে সিডনিতে পড়তে আসার লম্বা কাহিনীর সাথে আমার জীবন-জার্নিরও কোথায় যেন একটা মিল ছিল। এবং এ মিলই আমাদের বন্ধুত্বকে স্থায়ী করেছিল। জীবন চলে যাচ্ছিল ঘটনা-বিহীন নদীর মত। সকালে কাজে যাই, বিকালে ফিরে আসি। সজলও ইউনিতে যায় এবং বিকালে একটা খন্ডকালিন কাজ শেষে রাতে বাসায় ফেরে। অনেক রাত পর্যন্ত আমরা হরেক রকম গল্প করি। ১৯৯৯ সাল সজলের গ্রাজুয়েশনের বছর। ডিগ্রী পাওয়ার পর দেশে ফিরে যেতে হবে তাকে। লম্বা বিদেশ জীবনে সাথে খাপ খাওয়ানোর পর হঠাৎ করে দেশে ফিরে যাওয়ার ভেতর কোন উত্তেজনা থাকেনা, থাকে হতাশা ও অনিশ্চয়তা। সজলও লুকায়নি তার অনিশ্চয়তার কথা। ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতির পাশাপাশি চেষ্টা করছিল পশ্চিম গোলার্ধের কোথাও স্থায়ী হওয়ার। একরাতে বাসায় ফিরে অনেকটা ঠাট্টাচ্ছলেই জানাল আমেরিকায় ডিভি ভিসার জন্য এপ্লাই করতে যাচ্ছে। ইউনি হতে ফর্ম প্রিন্ট করে এনেছে। এবং আমার জন্য একটা কপি আনতেও ভুলেনি। এ নিয়ে আমরা অনেকক্ষণ গল্প করলাম এবং নিশ্চিত হলাম ২/৩ কোটি দরখাস্তকারী হতে মাত্র পাঁচ হাজার প্রাথমিক সিলেকশনে আমাদের সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। 'যদি লাইগ্যা যায়' এমন একটা সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে দরখাস্তটা জমা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। অনেকটা ঠাট্টাকরেই বললাম লটারি ফটারিতে আমার ভাগ্য অনেকটা ভাল এবং অবাক হবোনা যদি কোন এক সকালে সমন আসে দূরের দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হতে। সজলই টাইপ করে এনেছিল দরখাস্তটা। আমি কেবল সই করে দেই এবং মেইল পর্বটা সজলই সেরে নিয়েছিল। প্রায় ৬/৭ মাস কেটে যায় এ ফাঁকে। কোর্স শেষ করে সজলও ফিরে যায় বাংলাদেশে। ভুলে যাই আমেরিকার ডিভি ভিসা পর্ব।

২০০০ সাল। সিডনি অলিম্পিকের বিভিন্ন ইভেন্টের টিকেট কিনে অপেক্ষা করছি ঐতিহাসিক মুহূর্তের। এর আগে ১৯৮০ সালে মস্কো অলিম্পিকও মিস করেছিলাম অল্পের জন্য। বিকেলে বাসায় ফিরতে সুবেদ ভাইয়ের একটা ভয়েস ম্যাসেজ নিয়ে একটু চিন্তায় পরে গেলাম। ম্যাসেজের সারমর্ম ছিল মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট হতে একটা প্যাকেজ এসেছে আমার নামে। এর কোন আগা-মাথা ধরতে পারলামনা না। যোগাযোগের জন্য সবসময় সুবেদ ভাইয়ের ঠিকানা ব্যবহার করি কারণ আমি থাকি ভাড়া ফ্লাটে, যা যে কোন সময় পরিবর্তনের সম্ভাবনা থাকত। যাই হোক বিকেল করে ওনার বাসায় গেলাম। হাতে সরকারী একটা প্যাকেট নিয়ে থ হয়ে গেলাম। যেনতেন সরকার নয়, খোদ মার্কিন সরকার। বিদ্যুৎ খেলে গেল স্মরণ শক্তিতে। মনে পড়ল সজলের জমা করা ডিভি লটারির কথা। যা ভেবেছিলাম তাই; আমি সিলেক্ট হয়েছি। অর্থাৎ লটারিতে আমার নাম উঠেছে। এপ্লিকেশন ফর্মের শতাধিক রিকোয়ারমেন্ট পূরণ পূর্বক শেষ পর্যন্ত মার্কিন মুলুকে যাওয়া হবে কিনা এ নিয়ে দ্বিধায় পরে গেলাম। যাই হোক, নিজের উপর বিশ্বাস ছিল...বিশ্বাস ছিল কোনকিছুই অরাধ্য নয়, অন্যকেউ পারলে আমিও পারব। এবং এখান হতেই শুরু জীবন-জার্নির নতুন চাপটার। ঠিকানা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

চলবে।


ভালো লাগলে শেয়ার করুন