বেশ ক’বছর আগের কথা। কোন এক আবেগঘন দুর্বল মুহুর্তে আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের কর্নধার জনাবা শেখ হাসিনা ওয়াজেদ ঘোষনা দিয়েছিলেন, ’বয়স ৬০ বছর পূর্ণ আর ১৫ই আগষ্ট হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু বিচার পেলে রাজনীতি হতে সড়ে দাড়াব’। বক্তব্যাটা হুবহু এরকম ছিল এমনটা নাও হতে পারে, তবে সারমর্ম রোমান্থনে কোন ভূল আছে বলে মনে হয়না। সে যাই হোক, দেখতে দেখতে নেত্রীর বয়স ৬০ বছর পেরিয়ে গেল এবং অলৌকিক কিছু না ঘটলে ১৫ই আগষ্ট হত্যাকান্ডের বিচারও সফল সমাপ্তির মুখ দেখতে যাচ্ছে খুব শীঘ্র। তাহলে আমরা কি ধরে নিতে পারি প্রতিজ্ঞামত শেখ হাসিনা ক্ষমতা হতে সড়ে দাড়াবেন? নেত্রী চাইলে ২০১০ সালই হতে পারে এর জন্যে উত্তম বছর। রাজনীতির মাঠে নেত্রীর বিরোধী পক্ষ এখন মৃত প্রায়, নিকট ভবিষতে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করার আন্দোলন দানা বাধবে এমন কোন সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছেনা। সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে শেখ হাসিনা কি রাখতে যাবেন নিজের প্রতিজ্ঞা, আর রাখতে চাইলে কে হবেন উনার উত্তরসূরী, প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে নীচের লেখাটার দিকে আসুন একটু চোখ ঘুরাইঃ
ঢাকা হতে প্রকাশিত ইংরেজী দৈনিক ’ডেইলী ষ্টার’এ একটা খবর পড়ে খুব কৌতুহলী হয়ে এ লেখাটা লিখছি। জাতির ভাল-মন্দের জন্যে নিজের জীবন বিসর্জন দেয়ার ধাপ্পাবাজী মানুষ বাংলাদেশের রাজনীতিতে অভাব আছে বলে মনে হয়না। এমন একটা নতুন মানুষের সন্ধান পাওয়া গেল নববর্ষের প্রথম দিনে। পিতার মত উনিও নিজের জীবনকে উৎসর্গ করতে চান সোনার বাংলা গড়ার কাজে। পাঠক, আপনাদের চিনতে অসূবিধা হলে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি বাংলাদেশের নতুন ভাগ্য বিধাতাকে, উনি আর কেহ নন, শেখ পরিবারের কনিষ্ঠ কর্নধার জনাবা শেখ রেহানা। সিলেট মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের স্পনসরে স্থানীয় গোলড্ ক্লাবে দেয়া সম্বর্ধনা সভায় শেখ তনয়া ব্যক্ত করেছেন নিজের গোপন ইচ্ছার কথা। ‘ধর্ম নিরপেক্ষ সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই বঞ্চিত মানুষের অধিকার নিশ্চিত করা যেতে পারে, যেমনটা চেয়েছিলেন বংগবন্ধু, এবং আমিও প্রস্তূত নিজকে এ কাজে উৎসর্গ করার জন্যে’। বিনোদন সফরে সিলেটে আসা শেখ কন্যার এই উক্তির সাথে বড় বোন শেখ হাসিনার রাজনীতি হতে সড়ে দাড়ানোর কোন যোগসূত্র আছে কিনা জানা নেই, তবে ইদানিং এই দুই বোনকে প্রায়ই দেখা যাচ্ছে একসাথে বিদেশ সফর করতে,আর্ন্তজাতিক ফোরামে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে।
এ সবই এক বোন অন্য বোনকে হাতেকলমে রাজনীতি শিখিয়ে প্রধানমন্ত্রীত্ব তুলে দেবার প্রয়াস কিনা সময়ই তা ভাল বলতে পারবে, তবে একটা কথা নিশ্চিত, আমরা পায়ের আওয়াজ পাচ্ছি। বিলাত প্রবাসী শেখ তনয়াকে নেত্রী বলার সময় হয়ত এখনো আসেনি, কিন্তূ এরই মধ্যে তিনি যে গ্রাউন্ডওয়ার্ক শুরু করে দিয়েছেন তাতে কোন সন্দেহ থাকার কথা নয়। বাংলাদেশের মাটি আর মানুষের মাঝে বেড়ে উঠা একটা রাজনৈতিক দলের নেত্রীত্ব খুঁজতে আমাদের দৌড়াতে হচ্ছে পূর্ব লন্ডনে বসবাসরত একজন গৃহবধূর দুয়ারে, ব্যাপারটা মেনে নিতে একটু কস্ট লাগে। এ দলের নেতার তালিকায় এমন সব নাম আছে যাদের কথা এ দেশের মানুষ আজীবন শ্রদ্বাভরে উচ্চারন করছে। হোসেন শহীদ সরোয়ারর্দী, মাওলানা ভাষানী এবং শেখ মুজিব শুধু আওয়ামী লীগের নেতা হয়ে ইতিহাসে ঠাই নেন্নি, উনারা আমাদের জাতীয় নেতা এবং জাতির ইতিহাস যতদিন টিকে থাকবে এই নেতাদের নামও তাতে লেখা থাকবে স্বর্নাক্ষরে। এমন একটা দলের নেত্রীত্ব দিতে কাউকে যদি হাতেকলমে তৈরী করতে হয়, ধরে নিতে পারি কোথাও কোন গোলমাল হচ্ছে। শেখ রেহানা আক্ষরিক অর্থেই একজন গৃহবধূ, নিজের ভাল-মন্দের চাহিদা মেটাতে স্বদেশের চাইতে বিদেশকেই ভাল জায়গা হিসাবে বেছে নিয়েছেন, সেখানে ছেলেমেয়েদের মানুষ করেছেন, বিয়ে শাদী দিচ্ছেন, স্বামী সেবা করছেন। এমন একজন স্বার্থান্নেষী মানুষ হঠাৎ করে দেশের জন্যে জীবন উৎসর্গ করতে চাইছেন তাতে গর্বের চাইতে ভীত হচ্ছি বেশী, কারণ রেহানা উত্তান পর্ব না আবার আওয়ামী লীগের জন্য পতন পর্বের সূচনা হয়ে দাড়ায়।
হাসিনা উত্তর রেহানা, রেহানা উত্তর জয়, এভাবে আর কত ধর্ষন করা হবে গণতন্ত্রকে? নেত্রীত্বের জন্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যদি শেখ রেহানার বাইরে নেতা খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয় তাহলে দলটির কবর হওয়াই শ্রেয়। রাজনীতির নামে পারিবারিক পিকনিক দেশটির জন্যে ভাল কিছু আনতে পারে তার প্রমান শেখ হাসিনা নিজেই রাখতে পারেন্নি, শেখ রেহানার কথা না হয় বাদই দিলাম। অদূর ভবিষতে বাংলাদেশের মালিকানা নিয়ে দুই মেগা দলের লড়াইয়ের পরিবর্তে আর্ন্ত পারিবারিক লড়াই শুরু হলেও আবাক হওয়ার কিছু থাকবেনা। সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশে সবই সম্ভব।