নিউ ইয়র্ক হতে প্রকাশিত বাংলা পত্রিকার একটা খবর পড়ে লেখার লোভটা সামলাতে পারলামনা। খরবটা ছিল এ রকমঃ হাফিজুল ইসলাম তারেক আহ্বায়ক ও হাসান আল মামুন, এ.এন.এম. মাসুম, ফারম্নক হোসেন এবং আবীর পারভেজকে যুগ্ম আহবায়ক করে জাতীয়বাদী যুব দল অস্ট্রেলিয়া শাখার ২১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি, কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে।গতকাল ৪ ই জানুয়ারী ২০১০ তারিখে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বরকত উলাহ ভুলু ও দপ্তর সম্পাদক বেলাল আহমেদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে (http://www.khabor.com/)।
অষ্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে যোজন যোজন দূরত্ব তৈরী করতে দেশ দু'টোর মধ্যে দাড়িয়ে আছে বন জংগল, নদী নালা, সাগর আর মহাসাগর। অষ্ট্রেলিয়া শুধু একটা দেশই নয়, বিশাল একটা মহাদেশও। যতদূর জানি দেশটার রাজনৈতিক মাঠ লিবারেল ও লেবার নামের দু'টো রাজনৈতিক দলের দখলে। পওলিন হেনসনের ১-নেশন পার্টি বলেও একটা দলের অস্তিত্ব ছিল ৯০'এর দশকে। এ ধরনের রাজনৈতিক কাঠামোতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের মত বাংলাদেশী রাজনৈতিক দলের অংগ সংগঠন কোন ধরনের কার্য্যক্রম নিয়ে অষ্ট্রেলীয় জনগনের মন কাড়তে সক্ষম হবে তার কোন ব্যাখ্যা অবশ্য কমিটির কার্য্যক্রমে উল্লেখ নেই। আমার মত বেয়াক্কেলদের কাছে যেকোন দেশে রাজনৈতিক দল করা মানেই সে দেশের গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করা। সে অর্থে আমরা ধরে নিতে পারি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল অষ্ট্রেলিয়া শাখা অথবা যে কোন বাংলেদেশ ভিত্তিক রাজনৈতিক দল অষ্ট্রেলিয়া শাখার মূল উদ্দেশ্যও দেশটার রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল। আসলেই কি তাই? যেহেতু ছাত্রদলের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে, স্বভাবতই ধরে নিতে পারি অষ্ট্রেলিয়াতে ছাত্রলীগও আছে, সাথে আছে বিএনপি, আওয়ামী লীগ সহ বাংলাদেশী তাবৎ রাজনৈতিক দল, উপদল, কোন্দল, মারামারি, লাঠালাঠি, ইত্যাদী।
সিডনীর মারুবরা এলাকায় এনযাক প্যারেডের উপর একটা বারে বসে ভারত-অষ্ট্রেলিয়া ক্রিকেট খেলা দেখছিলাম। ওখানে পরিচয় হল বাংলাদেশ হতে ট্রেনিং'এ আসা জনৈক ডাক্তারের সাথে। পরিচয় পর্ব শেষ না হতেই অদ্ভূদ এক প্রস্তাব করে বসলেন ভদ্রলোক। বাংলাদেশের তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী তোফায়েল সাহেব নাকি সিডনীতে আছেন ব্যক্তিগত কাজে। ডাক্তার ভাই টানাটানি শুরু করে দিলেন এখনই যেন মন্ত্রীর সাথে দেখা করতে জর্জ ষ্ট্রীটের কোন একটা হোটেলে যাই। উদ্দেশ্য? বিশেষ কিছুনা, মন্ত্রীর সান্বিধ্য পেয়ে ধন্য হওয়া। দশটা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে উনাকে মাইনাস করেত হয়েছিল সে যাত্রায়।
শুধু সিডনী কেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থা আরও দশ ডিগ্রী উপরে। নিউ ইয়র্কের উডসাইড এলাকায় ৬১ ষ্ট্রীটের উপর বাংলাদেশী একটা রেষ্টুরেন্ট। কাজ হতে ফেরার পথে প্রায়ই দেখতাম ছোট একটা ব্যানার টানিয়ে রেষ্টূরেন্টের ভেতর কেউ একজন জ্বালাময়ী ভাষন দিচ্ছেঃ ভাইসব, হাইমচর এবতাদিয়া মাদ্রাসার উপর বাকশালীদের নগ্ন হামলা জাতি কোন ভাবেই বরদাশত্ করবেনা, টেকনাফ হতে তেতুলিয়া এক হয়ে র্দুবার আন্দোলনের মাধ্যমে জাতি এই জালিম সরকারকে গদি ছাড়া করবে ইনশ্আল্লাহ! বলাই বাহুল্য, হাত তালির বন্যায় ভেসে যেত রেষ্টুরেন্ট। নেক্সট ডোর থাই রেষ্টুরেন্টের গ্রাহক ও কর্মচারীরা প্রতিদিন অবাক হয়ে শুন্ত তাদের জন্যে অদ্ভূত এই কিচিরমিচির। কোথা সেই হাইমচর আর কোথায় এই উডসাইড, সমস্যা সমাধানের পার্ফেক্ট জায়গা বটে!
এত বছর বিদেশে থাকার পরেও কেন জানি এই জিনিষটা ধরতে পারলামনা, বিদেশে কেন বাংলাদেশী রাজনৈতিক দল! কি তাদের উদ্দেশ্য? কাদের ভাগ্য পরিবর্তনের লড়াই করছে এরা? বাংলাদেশীদের? প্রবাসে বাংলাদেশীদের জন্যে রয়ে গেছে স্ব স্ব দেশের আর্থ-সামাজক অবকাঠামো, সে জায়গায় বাংলাদেশী রাজনৈতিক কর্মসূচী বাস্তবায়ন শুধু অসারই নয়, বরং অবৈধ। অষ্ট্রেলিয়া/আমেরিকায় বংগবন্ধু অথবা শহীদ জিয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নের আদৌ কি কোন প্রয়োজন আছে? থাকলে এর আইনী বৈধতা কোথায়? আর যদি বিদেশে বসে এ ধরনের কার্যক্রমের উদ্দেশ্য হয়ে থাকে জন্মভূমির সেবা, বলতে বাধ্য হব, এ নিতান্তই বালখিল্যতা। দেশ সেবার উত্তম জায়গা দেশ, বিদেশ হতে পারেনা। বিদেশে দু'চার পয়সা অতিরিক্ত আয় করে দেশে পাঠানো গেলে বরং দেশ বেশী উপকৃত হতে পারে। আর এ জন্যে চাই যে দেশে আমাদের বাস সে দেশের মূলধারার রাজনীতির সাথে নিজদের সংপৃক্ত করা। বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ্রা বিদেশে ছাত্রদলের মত সংগঠন স্বীকৃতি দিয়ে নিজদের স্বার্থ হাসিলের ফাউন্ডেশন গড়ে থাকেন, এ সহজ সত্যটা বুঝতে প্রবাসীদের আর কতদিন দেরী হবে?