খালি চোখে অংকটা মনে হবে খুব সোজা, কিন্তু মেলাতে গেলে কেমন যেন আওলা চক্কর লেগে যায়। যোগ, বিয়োগ, গুন, ভাগ, চলতি আর ঐকিক হিসাবের সমন্বয়ে অংকটা কশতে গেলে প্রথমত ধৈর্য্যের সাথে খেলতে হয় ইঁদুর-বেড়াল খেলা, দ্বিতীয়ত অংকের ট্রেইল নিয়ে যায় এমন এক অনিশ্চিত অন্ধকারে যেখান হতে উদ্ধার পেতে চাইতে হয় প্রফেশনাল হেল্প। সমস্যা হল এই প্রেফশনাল অংকবিদ্রা যে কোন অংকের সমাধা দেন সাধারণত রাজনৈতিক সমীকরণে। ব্লগারদের জন্যে ওপেন করছি অংকটা, যাদের কাছে সহজ সমাধান আছে দয়া করে শেয়ার করবেন।
অংকঃ
গেল সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নামক রাজনৈতিক দলটি ওয়াদা করেছিল ক্ষমতায় গেলে খুব সল্প মূল্যে চাল খাওয়াবে ভোটারদের (এ সংখ্যা ১০ না ১৫ এ নিয়ে আমার চক্কর আছে)। আকাশচুম্বি চালের দাম রাতারাতি মাটিতে নেমে আসবে এমন একটা প্রত্যাশা নিয়ে দেশের মানুষ ক্রয় করতে বাধ্য হয় দলটির ওয়াদা। ভোটের দরিয়া পার হয়ে দলটি আসীন হয় ক্ষমতার মসনদে এবং যথা সময়ে সচেষ্ট হয় ওয়াদা বাস্তবায়নে। তত্ত্বাবধায়ক আমলের ব্যর্থ সরকারের ব্যর্থতার কারণে দেশে চালের দাম হাউমাউ করে বেড়ে গিয়েছিল, স্বভাবতই আশা ছিল যোগ্য সরকার ক্ষমতায় এলে যোগ্যতার যাদুর কাঠিতে রাতারাতি বদলে যাবে চালের দাম। আর এমন একটা মহান কাজ বাস্তবায়নে সরকার মহাশয় কাণ্ডারির আসনে বসিয়ে দেন মতিয়া চৌধুরী নামের অতিশয় গুনি একজনকে। বিদ্যুৎ হাহাকারের দেশ বাংলাদেশ। বিদ্যুতের অভাব ঘরে বাইরে, দিনে রাইতে, আকাশে বাতাসে। এমন একটা নাই নাই অবস্থায় জনগণের জন্যে বরাদ্দকৃত বিদ্যুৎ পাচার করা হয় সার কারখানায়। কারণ খুব সোজা, সারের সরবারহ সহজলভ্য করার মাধ্যমে চালের উৎপাদন বাড়াতে হবে, কমাতে হবে এর দাম, নির্বাচনী ওয়াদা! ইন দ্যা প্রসেস সার উৎপাদন বাড়ে, যা কৃষকের হাতে ধরা দেওয়ার আগে ধরা খায় অমুক লীগের সভাপতি, তমুক লীগের সাধারণ সম্পাদক, আসমানি লীগের দপ্তর সম্পাদকের পকেটে। যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণে সরকার মহাশয় মসনদ জয় করতে পেরেছিলেন তেনাদের অনেকেই মুখ দেখেন এমন এক অলৌকিক চিজের যার জন্যে মুখিয়ে ছিলেন গত ৮টা বছর। শেষ পর্যন্ত কৃষকের হাত হয়ে সার ঠাঁই নেয় ফসলের মাঠে। শুধু সার হলেই তো আর মাটি ফুঁড়ে ধান বেরিয়ে আসবেনা, তার জন্যে চাই নিরবিচ্ছিন্ন পানি সরবরাহ। পানি চাইলে চাইতে হয় বিদ্যুৎ। এখানেও সরকার মহাশয় উদার। আমজনতার বিদ্যুৎ কেড়ে নিয়ে পানির জন্যে নিশ্চিত করা হয় বিদ্যুতের স্পেশাল সরবারহ। কিন্তু এ বিদ্যুৎ কৃষকের হাতে ধরা খাওয়ার আগে ধরা খায় ওমুক লীগের সমর্থক ইঞ্জিনিয়ার, তমুক লীগের সমর্থক অফিস কারণিক, পিওন ও আসমানি লীগের সমর্থক ট্রেড ইউনিয়ন নেতার পকেট ফাঁদে। যাদের হাত ধরে যোগ্য এই সরকার ক্ষমতার স্বাদ নিয়েছিল তাদের অনেক কে ফিরিয়ে দেয়া হয় প্রয়োজনীয় কৃতজ্ঞতা। এত কিছুর পর শেষ পর্যন্ত কেড়ে নেয়া বিদ্যুৎ কথা বলতে শুরু করে। ফসলের মাঠ একাকার হয়ে যায় সোনালী ফসলে। কৃষকের মুখে ফুটে উঠে সাফল্যের হাসি। সে সাফল্যের ঢেউ আছড়ে পরে সরকার মহাশয়ের বুকে। কিন্তু এখানেই শুরু হয় অংকের মূল ট্যুইষ্ট। প্রডাক্ট বেশী তো দাম কম, এটা অর্থনীতির আমেঘো নিয়ম। সরকার দাম একটা ঠিক করে দেয় বটে, কিন্তু এ দামে কোথায় কে ক্রয় করবে তার কোন হদিশ পায়না হতভাগা কৃষক। অংকের বাজারে আবারও হাজির হয় সেই অমুক লীগের সভাপতি, তমুক লীগের সাধারণ সম্পাদক, আসমানি লীগের দপ্তর সম্পাদক সমর্থিত ব্যবসায়ী, ফড়িয়া, দালাল সহ শত শত ক্ষুধার্ত শকুন। তারা মাঠে নামে ফসলের সন্ধানে। ক্রয় করে নেয় উৎপাদিত ফসল। সরকারী ক্রয় কেন্দ্রে নাম মাত্র পরিমান বিক্রি করে বাকি অংশ রেখে দেয় সুসময়ের জন্যে। গ্রীষ্ম, বর্ষা আর শীতের শেষে আসতে বাধ্য হয় কাঙ্খিত সুসময়। অবিক্রীত বাকি অংশ মহামূল্যে বিক্রি হয় বাজারে। বিক্রীত মূল্যে রাজনীতি হয়, ভোট হয়, সে ভোটে কেউ এম্পি, কেউ চেয়ারম্যান, কেউবা আবার মেম্বার হয়। যথেষ্ট খাদ্য মজুদের সন্তুষ্টিতে সরকার মহাশয়ের বুক আসমানে উঠতে শুরু করে দেয়। অথচ যাদের হাত দিয়ে এই আয়োজন সেই কৃষকের দলকে বছর ঘুরবার আগেই ধর্ণা দিতে বাধ্য হয় মহাজনের দুয়ারে চড়া সুদে লগ্নির জন্যে।
অংকের যে চ্যাপ্টার আমার জন্যে বেশী জটিল তা হল, আমরা আমজনতা কেন আমাদের প্রাপ্য বিদ্যুৎকে কেড়ে নিতে দিচ্ছি এবং এ সমীকরণে বেনিফিটের পাল্লা কাদের দিকে বেশী ঝুঁকছে? আর কৃষকরা-ই বা কেন উৎপাদিত আলু রাস্তায় ফেলে প্রতিবাদ করতে বাধ্য হচ্ছে?
সার, বিদ্যুৎ, পানি আর ধানকে পুঁজি করে এ দেশের অলিগলিতে তৈরী হচ্ছে নতুন নতুন তারেক, ককো, মামুন, আজম, গুরু নানক আর শেখ সেলিমদের মত প্রফেশনাল চোর। বিদ্যুৎ ঘাটতি কারও জন্যে পৌষ মাস আর কারও জন্যে সর্বনাশ। পাঠক, এবার হিসাব করে বের করুন এই চক্রে আপনি নিজে কতটা ভূমিকা রাখছেন।