আমার এ লেখাটা আওয়ামী ঘরণার পাঠকদের কাছে যুদ্ধাপরাধী বিচার কাজে বাধার শামিল মনে হতে পারে। এ মুহূর্তে সরকারী কর্মকান্ডের যে কোন সমালোচনা মানেই নিজামী-মুজাহিদীদের পক্ষ নেয়া। যেহেতু লেখাটায় আওয়ামী সমালোচনায় ভরপুর, স্বভাবতই ধরে নেয়া যায় তা ৭১’এর ঘাতকদের বিচার হতে জনগণের দৃষ্টি সরিয়ে নেয়ার ব্লগীয় ষড়যন্ত্র। প্রাসঙ্গিক ভাবে মনে করিয়ে দেয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশের ঐতিহাসিক ঘোষনা, 'You are either with us or against us'। কথিত সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধে যারা আমেরিকার পক্ষ নেবে না তারা তালেবানী-আল কায়েদা পক্ষের, ইরাক যুদ্ধের ভূয়া প্রেক্ষাপট এভাবেই বিশ্বের সামনে উপস্থাপন করেছিলেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও একই ভাষায় কথা বলছে জাতির জন্যে খুবই সংবেদনশীল একটা ইস্যুকে হাতিয়ার বানিয়ে। বিরোধী দলের মানব বন্ধনের মত কর্মসূচী দূরে থাক বিদ্যুৎ, গ্যাস আর পানি নিয়ে সাধারণ অভিযোগ করার অর্থও নাকি বিচার কাজে বাধার সৃষ্টি করা। ভূমি মন্ত্রনালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি জনাব আ ক ম মোজাম্মেল একধাপ আগিয়ে ড্যাপ কর্মসূচীকেও একই অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন। বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ’সেন্টার ফর ডেমোক্রেসি রিসার্চ’ আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি বলেছেন, রাজউক একটি সম্পুর্ণ ব্যর্থ প্রতিষ্ঠান এবং এর ভেতর লুকিয়ে থাকা বিএনপি-জামাত জোটের এজেন্টরা যুদ্ধাপরাধী বিচার ঠেকাতে ড্যাপের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। বক্তার কথা মত ড্যাপ বাস্তবায়িত হলে ৪০ এমপির উপর প্রভাব পরবে এবং তা আওয়মী লীগকে ক্ষমতা হতে সড়িয়ে ৪ দলীয় জোটকে ক্ষমতায় বসাতে সহায়তা করবে।
ইলিয়াস মোল্লার কথা আশাকরি পাঠকরা ভুলে যাননি। এক ট্রাফিক সার্জেন্টকে মারধর করেছিলেন আওয়ামী লীগের এই সাংসদ। আক্রান্ত সার্জেন্ট এ নিয়ে মামলা পর্যন্ত করেছিলেন এবং এর উপর পুলিশ এসোসিয়েশনও কড়া একটা বক্তব্য প্রকাশ করেছিল। সর্বশেষ খবরে প্রকাশ, পুলিশ এসোসিয়েশনকে এ ধরনের বক্তব্য প্রকাশের জন্যে ক্ষমা চাইতে হয়েছে। যে সার্জেন্ট মামলা করেছিল এবং থানার যে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামলা নিয়েছিল তাদের উভয়ের মাথায় ঝুলছে চাকরী হারানোর খড়গ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সমন্বয় কমিটিতেও বিষয়টা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সভা হতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে সাংসদের বিরুদ্বে মামলা করার আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নেয়ার জন্যে। একই নির্দেশে বলা হয়েছে কাজ করতে গেলে সাংসদদের ছোটখাট ভুল হতেই পারে। এ ধরনের ছোটখাট ভুলের জন্যে মামলা করার আগে মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনা করারও নাকি প্রয়োজন ছিল। সাংসদের বিরুদ্বে ট্রাফিক সার্জেন্ট কার প্ররোচনায় মামলা করেছিল তার তদন্তের জন্য নির্দেশ গেছে পুলিশ আইজির কাছে। সন্দেহ নেই এখানেও সন্ধান করা হবে যুদ্ধাপরাধী বিচার কাজে বিরোধী দলের বাধার ষড়যন্ত্র।
দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্রলীগের সোনার ছেলেদের হাতে পুলিশ বাহিনী নিগৃহীত হওয়ার কাহিনী এখন আর পত্রিকায় আসে না। শুধু পুলিশ নয় সাংবাদিকরাও রেহাই পাচ্ছে না সোনার ছেলেদের রূপালী কাহিনী সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ করে। অবশ্য লীগের এ ধরনের ছোটখাট ভুলের জন্যে সরকারের কোন পর্যায় হতেই নির্দেশ যায় না আইজি অফিসে। মন্ত্রী আর সাংসদ বানানোর কারিগর ছাত্রলীগের এসব সন্মানিত সদস্যদের সন্মান আইনী প্রটেকশন নিশ্চিত করার দাবি জানানোর জন্যেই আমার লেখা। চাইলে এখানেও পাওয়া যাবে নিজামী-মুজাহিদীদের বাচানোর ষড়যন্ত্র। সমীকরণের বাকি অংশটা সমাধানের ভার পাঠকদের উপরই ছেড়ে দিলাম।