গল্পটা বেশ চালু গল্প, বিশেষ করে এঞ্জিনীয়ারিং মহলে। বাংলাদেশের কোন এক উপজেলা শহর। স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রনালয়ের অধীনে পুকুর কাটার প্রকল্প পাশ করা হল অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে। বেশ বড় প্রকল্প, বড় অংকের টাকা জড়িত প্রকল্প বাস্তবায়নে। ক্ষুধার্ত এঞ্জিনীয়ারং গুষ্টি ও প্রকল্প ব্যবস্থাপনা চক্র একহয়ে সিদ্বান্ত নিল অনেকদিন টাকা পয়সার মুখ দেখা হয়না, পুকুর কাটা বাদ দিয়ে প্রকল্পের পুরো টাকাটাই নিজদের ভেতর ভাগাভাগি করতে হবে। বাস্তবেও হল তাই, যে যাঁর পকেট ষ্ফীত করে নির্ধারিত সময় কাটিয়ে বদলি হয়ে চলে গেল অন্য শহরে। নতুন রাজনৈতিক সরকারের আওতায় নতুন ব্যবস্থাপনা ও এঞ্জিনীয়ারিং দল আসতে বিশেষ দেরী হলনা। কাগজপত্র ঘেটে তাঁরা বুঝে পারল পুকুর কাটার নামে বড় ধরনের পুকুরচুরি হয়ে গেছে এখানটায়। তারাই বা বাদ যাবে কেন, সিদ্বান্ত নিল উপরওয়ালার কাছে নতুন একটা প্রকল্প উপস্থাপন করতে হবে। ঢাকার প্রকল্প অফিসে বেশ ইনিয়ে বিনিয়ে বলা হল, গেল ম্যানেজমেন্টের আমলে কাটা পুকুরটা জনজীবনে বড় ধরনের অসূবিধা করছে, তাই ভরে ফেলতে হবে এটাকে। প্রকল্প পাশ হল, টাকা এল এবং সবাই মিলে ভাগাভাগি করে নিল।
বাংলাদেশ বিমানের দুরবস্থার উপর স্থানীয় দৈনিকের একটা প্রতিবেদন পড়ছিলাম। আবুধাবিতে গত ১০ই জানুয়ারী আগুন লাগে বিমানের ডিসি-১০ উড়োজাহাজের একটা এঞ্জিনে। পরদিন ঢাকা-চট্টগ্রাম-মাস্কাট ফ্লাইটের আরও একটা ডিসি-১০ উড়োজাহাজ বিকল হয়ে পরে চট্টগ্রামে। উড়োজাহজ বিশেষজ্ঞরা অনেক আগেই মত দিয়েছেন বিমানের বোঝা মান্ধাতা আমলের ডিসি-১০ গুলো না সড়ালে বিমান বাংলাদেশ কোনদিনই পায়ের উপড় দাঁড়াতে পারবেনা। কিন্তূ মহল বিশেষ এই উড়োজাহাজগুলোকে ফ্লাইট বহরে ধরে রাখার জন্যে একেবারেই বেপরোয়া। কারণ? মেরামত বানিজ্য। হিসাব মতে নতুন একটা উড়োজাহাজ পরিচালনা ব্যয় ঘন্টায় ৪ হাজার ডলার, আর বিমানের ডিসি-১০ উড়োজাহাজ পরিচালনা ব্যয় ঘন্টায় ১২হাজার ডলার। বিমান বহরে বর্তমানে ডিসি-১০’এর সংখ্যা চারটি।
বিমান প্রতিবছর গড়ে উড়োজাহাজের প্রায় দুই হাজার যন্ত্রাংশ দেশের বাইরে মেরামত করিয়ে থাকে। বিমানের তালিকাভুক্ত মেরামতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো মেরামত শেষে যন্ত্রাংশের ব্রেকডাউন পার্টস (খুচরা যন্ত্রাংশ) পরিবর্তন না করেও ইনভয়েস (ভাউচার) দেখিয়ে গড়ে প্রতিটি যন্ত্রাংশের বিপরীতে কয়েক হাজার ডলার অতিরিক্ত বিল করে থাকে মেরামতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। সেই হিসাবে বছরে গড়ে দুই হাজার যন্ত্রাংশের বিপরীতে বিমান বছরে ৩০ কোটি টাকা গচ্চা দিচ্ছে। মেরামতকারী প্রতিষ্ঠানের নামে কতিপয় মধ্যস্বত্বভোগীর সঙ্গে যোগসাজশ রয়েছে বিমানের একশ্রেণীর কর্মকর্তার। কারণ মেরামত কাজে হাত দিতে পারলেই মেলে অর্থ। বিমানের স্টোর বিভাগের ২০০৬ সালের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ভুয়া কাজ বন্ধ করায় ওই বছর ৩০ কোটি টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব হয়েছিল। অথচ তার আগের বছরেও ৩০ কোটি টাকা বেশি নিয়ে গিয়েছে এই ব্যবসায়ীরা।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে হয়তো উড়োজাহাজের একটি যন্ত্রাংশ পরিবর্তন করা হলো। এ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট চক্র তখন একটির স্থানে তিনটি যন্ত্রাংশের বিল দেখাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে আবার অতিরিক্ত বিল দেখিয়ে বিমানের উড়োজাহাজ মেরামত করে মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ীরা বছরে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ওয়ার্কশপের কারিগরি রিপোর্টে দেখা যায়, প্রকৃতপক্ষে যন্ত্রাংশ বদল করা হয়নি। তারপরও শুভঙ্করের ফাঁকি দিয়ে বিল করে টাকা নিয়ে যাচ্ছে। খোদ শীর্ষস্থানীয় কর্তাব্যক্তিরা এর দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকায় বছরের পর বছর ধরে বিমানের কোটি কোটি টাকা লুটপাট হয়ে যাচ্ছে। দুর্নীতিবাজ কর্তারা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের কাছ নিয়মিত মাসোহারা পেয়ে থাকে। ঈদের সময় মেলে বিশাল অঙ্কের বোনাস।
নিউ ইয়র্ক-ঢাকা রুটের বিমান পরিচালনাকে অলাভজনক বলে যেদিন বন্ধ করে দেয়া হল আমার মত ম্যাংগো পিপলদের অনেকেই অবাক হয়নি। বিমানের টিকেট নিয়ে তোঘলকী কারবার আর উপরে বর্নিত করুন ইতিহাস, এই দুইয়ের সমন্বয়ে পৃথিবীর কোন এয়ারলাইন্স টিকে থাকে এর কোন নজিড় নেই। ধন্য দেশের ধন্য বিমান!
সূত্রঃ http://www.shamokal.com/