সহযাত্রী
১৯৯৮ সাল। যাবাে কলকাতা-মুম্বাই। ঢাকা এয়ারপাের্ট পৌছে প্যাসেঞ্জার লাউঞ্জে দেখি আমার চেনা চমৎকার এক যুবতী, বয়স ছাব্বিশ-সাতাশ। শাদা কাপড়ের স্কিনটাইট প্যান্টের ওপর হাল্কা গােলাপি রঙয়ের স্লিভলেস টাইট গেঞ্জি পরা, দুটো বােতামই খােলা।
১৯৯৮ সাল। যাবাে কলকাতা-মুম্বাই। ঢাকা এয়ারপাের্ট পৌছে প্যাসেঞ্জার লাউঞ্জে দেখি আমার চেনা চমৎকার এক যুবতী, বয়স ছাব্বিশ-সাতাশ। শাদা কাপড়ের স্কিনটাইট প্যান্টের ওপর হাল্কা গােলাপি রঙয়ের স্লিভলেস টাইট গেঞ্জি পরা, দুটো বােতামই খােলা।
ইউরোপ তুলনামূলক ছোট মহাদেশ। দেশ অনেক, কিন্তু একদেশ হতে অন্যদেশ আকাশ পথে রওয়না দিলে ভ্রমণ খুব একটা দীর্ঘ হয়না। ট্রেন জার্নির অবস্থাও একই রকম। ঘাটে ঘাটে সীমান্ত অতিক্রম করার ঝামেলা না থাকলে এক কোনা হতে অন্য কোনায় যেতে খুব একটা সময় লাগার কথা না।
পোল্যান্ড হতে রওয়ানা দিয়ে ট্রেনে খুব একটা ঘুমাতে পেরেছি তা নয়। চার বিছানার কম্পার্ট্মেন্টে দুটোই ছিল খালি। একমাত্র সহযাত্রী ওয়ারশ হতে যোগ দিয়েছে। প্রয়োজনীয় কিছু কথা ছাড়া তেমন কোন বাক্যালাপ হয়নি। উঠার সাথে সাথে ব্যাগ হতে ভদকার বোতল নামিয়ে বসে গেছে নিজ কাজে।
প্রকৃতির পরিবর্তন কত দ্রুত ঘটতে পারে পূর্ব ইউরোপের ঐ অংশে বাস না করলে হয়ত বুঝতে পারতাম না। শীতের রাজত্ব ঐ অঞ্চলে প্রশ্নাতীত। সেই যে সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে তুষারপাত শুরু হয় তার শেষ কবে কেউ জানেনা। ডিসেম্বরের শুরুতে বরফ এসে জায়গা করে নেয় তুষারপাতের।
গল্প আমাকে দিয়ে হয়না। তাই যদি হতো তাহলে পৃথিবীর যত গলিতে পা রেখেছি, যত মানুষের সাথে মিশেছি তাদের সবাইকে নিয়ে লিখতে গেলে জমজমাট গল্প লেখা যেতো। এসব গল্পের প্রেক্ষাপট ছিল। ছিল পার্শ্ব চরিত্র। স্মৃতির গলি হাতড়ালে খুঁজে পাওয়া যাবে নায়িকাদেরও। মাঝেমধ্যে লিখতে ইচ্ছে করে। পাঠকদের সাথে শেয়ার করতে ইচ্ছে করে জীবন নদীর গল্প।
ভিলনিউস। পূর্ব ইউরোপ হতে যাত্রা করে পশ্চিম ইউরোপে যাওয়ার পথে প্রথম বিরতি। সেন্ট পিটার্সবার্গ হতে প্রায় ৭২৫ কিলোমিটার পথ। দু'দিন দু'রাত্রির বিরামহীন ট্রেন জার্নির প্রথম পর্বে সাধারণত কোন বৈচিত্র থাকেনা। জানালার বাইরে তাকালে শুধু মাইলের পর মাইল সোভিয়েত জনপদ। কোথাও শূন্য, কোথাও আবার বিছিন্ন দু'একটা পরিবারের নির্জনাতায় বেঁচে থাকার লড়াই।
ওটাই ছিল আমার শেষ বিলাত যাত্রা। অনেক স্মৃতি, অনেক কাহিনী, অনেক গল্পের শেষ হবে এ গ্রীস্মের পর। ১৯৭৬ সালে শুরু হওয়া জার্নির ইতি টানবো এ যাত্রায়। মাঝখানে বাল্টিক সাগরের পানি অনেকদূর গড়িয়ে যাবে। দুই পৃথিবীর দুই জীবন খুব কাছ হতে দেখার সুযোগ হবে। দেখা হবে অনেক দেশ।
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কোন আগ্রহ নেই। আগ্রহ থাকার কোন কারণও নেই। হোক তা জাতীয় অথবা স্থানীয় পর্যায়ে। কারণ দেশটার নির্বাচনী প্রক্রিয়া এখন কেবল প্রশ্নবিদ্ধই নয়, বরং পা হতে মাথা পর্যন্ত ইঞ্জিনিয়ারড্। নির্বাচন মানে ক্ষমতাসীন দলের পেশী শক্তি প্রদর্শনের র্নিলজ্জ মহড়া।
ট্রাম্পের ক্ষমতায়ন ও তার মিথ্যার সাগরে ভাসা ৪ বছরের শাসনকে কেন ভারতের মত গনতান্ত্রিক দেশের কোটি কোটি মানুষ সমর্থন করেছিল ব্যপারটা বুঝতে আমার একটু সময় লেগেছিল। ভারতীয় সমর্থনের এই ঢেউ যখন বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের ভাসিয়ে নিতে শুরু করল কেবল তখনই আমি আমার প্রশ্নের উত্তর পেতে শুরু করেছিলাম।
জেনিফার ছিল আমার সহকর্মী। অফিসের এমন কেউ ছিলনা যার সাথে তার ঝগড়া বাধেনি। একমাত্র আমি ছিলাম এর বাইরে। বাকি সবাই অবাক হতো আমাদের দুজনের ঝামেলাবিহীন সম্পর্ক দেখে। চল্লিশ বছর বয়স্ক সোনালী চুলের এই মহিলা জাতে উগ্র বর্ণবাদী। কথায় কথায় আমেরিকার তাবৎ সমস্যার জন্যে কালো, লাতিনো ও ইমিগ্রেন্টদের দায়ীকরে অশ্লীল সব মন্তব্য করতেন।